আয়নাল হোসেন : হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মান (স্ট্যান্ডার্ড) প্রণয়ন করছে জাতীয় মান সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। মান প্রণয়নের কাজটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এরই মধ্যে মান প্রণয়ন কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করে একটি আদর্শ কাঠামো তৈরি সম্পন্ন করেছে।
বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে ইথাইল অ্যালকোহল ও আইসোপ্রোপাইল। এই দুটি উপাদান কমপক্ষে ৭০ শতাংশ থাকতে হবে। আর পিএইচ ভ্যালু ৫-৮, গ্লিসারিন, অ্যালোভেরা জেল, সুগন্ধি ও রং থাকতে পারবে। তবে ২৫০ পিপিএম মিথানল ও ৮০ পিপিএম পিরিডিন গ্রহণযোগ্য মাত্রায় থাকবে। এর বেশি পরিমাণে থাকতে পারবে না।
জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (মান) প্রকৌশলী এসএম ইসহাক আলী শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমানে কভিড-১৯ মহামারির কারণে মানুষ যাতে মানসম্মত হ্যান্ড স্যানিটাইজার গ্রহণ করতে পারে, সেজন্য পণ্যটির একটি আদর্শ মান প্রণয়নের কাজ চলছে। কভিড-সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি পণ্যের মান প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মান বিএসটিআই প্রণয়ন করলেও পণ্যটি তৈরির অনুমোদন দিচ্ছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) আইয়ূব হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, বিএসটিআই পণ্যটির মান প্রণয়ন করতে পারে। তাতে ওষুধ প্রশাসনের আপত্তি নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির অনুমোদিত ফর্মুলা অনুযায়ী হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির অনুমোদন তারা দিচ্ছেন।
করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর সব ধরনের মানুষ স্যানিটাইজার ব্যবহার শুরু করে। এতে রাতারাতি পণ্যটি মূল্য কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অনেক নাম-অজানা প্রতিষ্ঠানও স্যানিটাইজার তৈরি শুরু করে। আর একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মোটা অঙ্কের মুনাফার জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বাজারে নানা ধরনের স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এসব স্যানিটাইজারের কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেই। অপরদিকে এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির প্রধান উপাদান ইথানলের পরিবর্তে অনেকেই মিথানল ব্যবহার করছেন। এতে অসাধু ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের মুনাফা করছেন। আর মিথানল ব্যবহারের কারণে অগ্নিঝুঁকি রয়েছে।
জানা গেছে, ইথাইল অ্যালকোহল ও আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের মূল্য বেশি থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা মিথানল ব্যবহার করছেন। এতে মানুষের ত্বকে সমস্যা তৈরি ছাড়াও আগুন লাগার ভয় রয়েছে। সম্প্রতি স্যানিটাইজার থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এক চিকিৎসক দম্পত্তি মারা যান।
রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড ও বাবুবাজার এলাকায় অসংখ্য ভাসমান হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দোকান বসছে। বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর নিচে হাট বসেছে। এছাড়া ফুটপাথজুড়ে রয়েছে এসব স্যানিটাইজারের দোকান। এখানে স্যানিটাইজার ভরার জন্য বিভিন্ন আকারের স্প্রে বোতল রয়েছে। আকার অনুযায়ী এসব বোতল বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে গড়ে উঠেছে স্যানিটাইজারের দোকান।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাবেক পরিচালক জাকির হোসেন রনি শেয়ার বিজকে বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মান প্রণয়নের বিষয়টি খুবই ভালো উদ্যোগ। বাজার মানহীন স্যানিটাইজারে ছেয়ে গেছে। এসব স্যানিটাইজারে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি ও হাতের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। মানহীন স্যানিটাইজার যাতে বাজারে বিক্রি না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের তদারকি জোরদার করার দাবি করেন তিনি।
হ্যান্ড স্যানিটাইজহার তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি গাইডলাইন রয়েছে। কিন্তু গাইডলাইন অনুযায়ী অনেকেই তা তৈরি করছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ওষুধ প্রশাসন স্যানিটাইজার তৈরির অনুমোদন দিয়ে আসছে। অ্যালকোহল ৭০-৯৯% স্পিরিট বা অ্যালকোহল ব্যবহার করার নিয়ম রয়েছে। এই পণ্যের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রেসিপি অনুযায়ী তৈরির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়ে থাকে। তবে বাজারে দেখা যাচ্ছে, একেকটি প্রতিষ্ঠান একেক ধরনের অ্যালকোহল বা স্পিরিট ব্যবহার করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ডে হ্যান্ড সেনিটাইজার তৈরি হচ্ছে। কেউ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান ব্যবহার করছে, আবার কেউ যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইউএস এফডিএ) মান অনুযায়ী তৈরি করছেন। তবে দেশের বাজারে যেসব স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো আদৌ সেসব মান অনুসরণ করছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।