শেয়ার বিজ ডেস্ক: নোট বদল নিয়ে এবার সংকটে পড়েছে ভেনিজুয়েলা। ১০০ বলিভার নোট বাতিল নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করছে সাধারণ মানুষ। আর এটিকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শনিবার বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্থানে দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালিয়েছে। সড়ক অবরোধসহ যানবাহনে হামলার ঘটনাও ঘটছে। খবর বিবিসি।
এর আগে ভারতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের কারণে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতেও রাজপথে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। ভেনিজুয়েলায় দীর্ঘদিন যাবৎ চলছে অর্থনৈতিক সংকট। দেশটির মুদ্রাস্ফীতির হার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি ভেনিজুয়েলার মুদ্রা বলিভার রেকর্ডমূল্য হারিয়েছে। মুদ্রার দরপতনের পর দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ৫০০ ও ২০০০ বলিভারের নোট ছাড়ে। কিন্তু দেশটিতে চলমান খাবার সংকটে পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। খাবার নিয়ে লুটতরাজ আর হানাহানি সেখানে নিত্য ঘটনা।
এ পরিস্থিতিতে খাদ্য পাচার বন্ধ এবং খাবার সংকট নিয়ন্ত্রণের আশা নিয়ে ১০০ বলিভার নোট বদলে কয়েন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর জন্য সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, খাবার সংকটের কারণে সরকার খাদ্যদ্রব্যে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। আর এ ভর্তুকি দেওয়া খাবার পাচারকারীরা বেশি দামে সীমান্ত পার হয়ে কলম্বিয়ায় বিক্রি করছে।
এ বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলছেন, নোট বদলের সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর হলে পাচারকারীরা অর্থ বদলানোর সুযোগ পাবে না। পাচারকারীদের কাছে ১০০ বলিভারের নোট থাকলে অচল নোট নিয়ে তাদের ঘুরতে হবে।
কিন্তু এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে দেশটিতে। ছয়টি শহরজুড়ে এই বিক্ষোভ হয়েছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে বিক্ষোভকারীদের। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৩০ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংঘর্ষে একজন আহত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে ওই বিক্ষোভের পেছনে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো। তিনি দাবি করেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ভাঙচুরের প্রচেষ্টা এবং সহিংসতার ছবি ও ভিডিওচিত্র তার কাছে আছে।
এদিকে নোট পরিবর্তনের জন্য ব্যাংকগুলোর সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। বুথগুলোয় পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও পুরোনো নোটই সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য মাদুরো সরকার জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোয় নতুন করে অর্থ বিতরণ করা হয়েছে এবং জানুয়ারিতে সরবরাহ পুরোপুরি চাহিদা মেটাবে।
১২ ডিসেম্বর ১০০ বলিভার নোট বাতিলের ঘোষণা দেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ঘোষণা অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে ১০০ বলিভার নোট পাল্টে সমমানের ধাতব মুদ্রা বা ছোট নোট সংগ্রহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল জনগণকে।
সীমান্তে চোরাকারবারি ও খাদ্যসংকটকে সামাল দিতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাই মুদ্রা পাচার ঠেকাতে এই ঘোষণা দেওয়ার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্রাজিল ও কলাম্বিয়া সীমান্ত। তিন দিন সময় পার হয়ে গেলেও নোট বদল করে নিতে পারেনি বেশিরভাগ মানুষ। ভেনিজুয়েলার মোট অর্থ সরবরাহের অর্ধেকই হচ্ছে ১০০ বলিভার নোটে। কয়েক বছর ধরেই দাম হারাচ্ছিল ১০০ বলিভার নোট। বর্তমানে এই নোট মাত্র দুই মার্কিন সেন্টে বিনিময় হচ্ছে।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে থাকা ভেনিজুয়েলার অন্যতম প্রধান সমস্যা ব্যাপক মূল্যস্ফীতি। ২০১৫ সালে মূল্যস্ফীতির সবশেষ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে দেশটির সরকার। এতে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতির হার ১৮০ শতাংশ। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল মনে করছে, ২০১৭ সালে দেশটির মূল্যস্ফীতি আরও অনেক বাড়বে। মূলত, দুবছর ধরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে ভেনিজুয়েলা। দেশটির রপতানি আয়ের শতকরা ৯৫ ভাগই আসে জ্বালানি তেল থেকে। তাই তেলের দাম কমে যাওয়ায় রফতানি আয়ও কমেছে দেশটির।
Add Comment