১০,২২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১০ কোম্পানির হাতে

ইসমাইল আলী: দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রতি বছর বাড়ছে। সরকারি ছাড়াও বেসরকারি প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে এ খাতে। পাশাপাশি এসেছে বিদেশি বিনিয়োগ। এতে ছোট-বড় বিভিন্ন দেশীয় গ্রæপ এবং বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি যুক্ত হয়েছে দেশের বিদ্যুৎ খাতে। তবে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশিরভাগই কিছু সংখ্যক গ্রুপ বা কোম্পানির হাতে কেন্দ্রীভ‚ত হয়ে আছে। দেশি-বিদেশি মিলে বর্তমানে ১০টি গ্রæপ বা কোম্পানির সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২২৮ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, দেশের বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ সামিট গ্রুপের হাতে। এ গ্রুপের অধীনে বর্তমানে ১৪টি ছোট-বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ৫৮৯ মেগাওয়াটের দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক (গ্যাস-ডিজেল) মেঘনাঘাট-২ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র (সিসিপিপি)। সামিটের আরেকটি ৩৩৫ মেগাওয়াট মেঘনাঘাট-১ দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (সিসিপিপি) রয়েছে। আর বিবিয়ানায় রয়েছে সামিটের ৩৪১ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক আরেকটি (সিসিপিপি) বিদ্যুৎকেন্দ্র।

গাজীপুরে রয়েছে সামিটের ফার্নেস অয়েলচালিত দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে কড্ডা-১ কেন্দ্রটির সক্ষমতা ১৪৯ মেগাওয়াট, যা এইস অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত। আর কড্ডা-২ কেন্দ্রটির সক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট। এছাড়া সামিট বরিশাল ১১০ মেগাওয়াট, সামিট মদনগঞ্জ-১ ৫৫ মেগাওয়াট ও মদনগঞ্জ-২ ১০২ মেগাওয়াট, সামিট পাওয়ার (মাধবধী ও আশুলিয়া) ৮০ মেগাওয়াট, মাওনা ৩৩ মেগাওয়াট, রূপগঞ্জ ৩৩ মেগাওয়াট, জঙ্গলিয়া ৩৩ মেগাওয়াট, কুমিল্লা ২৫ মেগাওয়াট এবং উল্লাপাড়া ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র সামিট গ্রæপের।

ভারতের আদানি পাওয়ারের ঝাড়খণ্ডের গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে। কয়লাভিত্তিক এ কেন্দ্রটি ভারতে নির্মাণ করা হলেও ২৫ বছর এটি থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। সক্ষমতার দিক থেকে দেশের ভেতরে নির্মিত সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় সমান অংশীদার রয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডবিøউপিজিসিএল) এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) মালিকানাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ২৩৪ মেগাওয়াট। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে বাংলাদেশের পিডিবি ও ভারতের জাতীয় তাপবিদ্যুৎ করপোরেশনের (এনটিপিসি) ৫০ শতাংশ করে শেয়ার রয়েছে। আর বাংলাদেশের এস আলম গ্রæপ ও চীনের সেপকো থ্রির যৌথ মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট। কয়লাভিত্তিক এ কেন্দ্রটি দেশের তৃতীয় বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র।

সক্ষমতার দিক থেকে দেশে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দেশের ইউনাইটেড গ্রুপ। এ গ্রুপের ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ৯৮৫ মেগাওয়াট। তবে এ গ্রæপের আরেকটি ৫৯০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ চলছে। বর্তমানে ইউনাইটেড গ্রæপের সবচেয়ে বড় কেন্দ্রটি আনোয়ারায় অবস্থিত। ৩০০ মেগাওয়াটের এ কেন্দ্রটি ফার্নেস অয়েলচালিত। এছাড়া ইউনাইটেড আশুগঞ্জ ১৯৫ মেগাওয়াট, জামালপুর ১১৫ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহ ২০০ মেগাওয়াট, পটুয়াখালী ১৫০ মেগাওয়াট এবং শাহজাহানউল্লাহ পাওয়ার ২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রগুলো ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকানাধীন।

সক্ষমতার দিক থেকে পরের স্থানে থাকা ওরিয়ন গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ছয়টি যেগুলোর সক্ষমতা ৬১১ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১০০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র রয়েছে সৌরবিদ্যুতের। বাকিগুলো সবই ফার্নেস অয়েলচালিত। এর মধ্যে ওরিয়ন রূপসা ১০৫ মেগাওয়াট, সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, মেঘনাঘাট ১০০ মেগাওয়াট ও ১০৪ মেগাওয়াট এবং গঙ্গাবাজার ১০২ মেগাওয়াট।

ডরিন গ্রæপের বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ৯টি যেগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা ৬১১ মেগাওয়াট। এর মধ্যে রয়েছে নরসিংদী ২২ মেগাওয়াট, ফেনী ১১ মেগাওয়াট ও ২২ মেগাওয়াট, টাঙ্গাইল ২২ মেগাওয়াট, নবাবগঞ্জ ৫৫ মেগাওয়াট, মানিকগঞ্জ ৫৫ মেগাওয়াট ও ১৬২ মেগাওয়াট, চাঁদপুর ১১৫ মেগাওয়াট এবং বাঙ্কো এনার্জি ৫৪ মেগাওয়াট।

কনফিডেন্স গ্রæপের পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ৪০৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে রয়েছে হবিগঞ্জ ১১ মেগাওয়াট, বগুড়া ইউনিট-১ ১১৩ মেগাওয়াট ও ইউনিট-২ ১১৩ মেগাওয়াট, রংপুর ১১৩ মেগাওয়াট এবং জয়িডাক পাওয়ার ৫৪ মেগাওয়াট। আর বারাকা গ্রুপের চার বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ৩১৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে রয়েছে বারাকা পাওয়ার (বরকতউল্লাহ) ৫৪ মেগাওয়াট, বারাকা পতেঙ্গা ৫০ মেগাওয়াট, শিকলবাহা ১০৫ মেগাওয়াট এবং কর্ণফুলী ১১০ মেগাওয়াট।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০