Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:37 am

১০৪ কোটি ডলার ধার শোধে ঋণ নেয়ার প্রস্তাব পিডিবির

ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ বা রেন্টাল ও আইপিপির বিলও দিতে পারছে না পিডিবি। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ খাতে সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এজন্য বাধ্য হয়ে দেশি-বিদেশি ঋণের দিকে ঝুঁকছে পিডিবি। এ নিয়ে শেয়ার বিজের ধারাবাহিক আয়োজনের আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব

ইসমাইল আলী: আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে কঠিন শর্তে ইসিএ (এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি) ঋণ নিয়েছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তবে ডলার সংকটে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থা। ফলে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়া ছাড়াও গুনতে হবে জরিমানা। এজন্য ইসিএ ঋণের বিপরীতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে চায় পিডিবি। এতে ঋণ পরিশোধে বর্ধিত সময়ও পাওয়া যাবে। আর নতুন ঋণ দিয়ে পুরোনো ঋণ পরিশোধ করবে সংস্থাটি।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এতে ইসিএ ঋণের বিস্তারিত চিত্র উঠে এসেছে। চিঠির তথ্যমতে, আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ১৭৬ কোটি পাঁচ লাখ ডলার ঋণ নিয়েছিল পিডিবি। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ৭২ কোটি ২৫ লাখ ডলার। আরও ১০৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার ঋণ বাকি রয়েছে। এছাড়া ইসিএ ঋণের সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।

অবশিষ্ট ঋণ পরিশোধের জন্য বছরে ১৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলার প্রয়োজন। তবে ডলার সংকটে এ কিস্তি পরিশোধে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। ব্যাংকগুলো নিয়মিত ডলার দিতে পারছে না। যদিও এসব ঋণের বিপরীতে সভরেন (রাষ্ট্রীয়) গ্যারান্টি রয়েছে। তাই ইসিএ ঋণ শোধে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাওয়ার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করে পিডিবি।

চিঠির তথ্যমতে, শাহজিবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র (সিসিপিপি) নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ১১ লাখ ডলার। এর মধ্যে ইসিএ ঋণ নেয়া হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি ৭১ লাখ ডলার। এ প্রকল্পে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি দেয়া হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল। এ পর্যন্ত প্রকল্পটির প্রায় ১৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। এছাড়া সুদ পরিশোধ করা হয়েছে চার কোটি ৯২ লাখ ডলার। প্রকল্পটির ঋণ এখনও বাকি রয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।

একইভাবে ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ইসিএ ঋণ নেয়া হয়েছে প্রায় ২২ কোটি ১১ লাখ ডলার। এ প্রকল্পে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি দেয়া হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। এ পর্যন্ত প্রকল্পটির ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ১৫ লাখ ডলার। এছাড়া সুদ দেয়া হয়েছে তিন কোটি ১৬ লাখ ডলার। আর ঋণ এখনও বাকি রয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।

বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মেগাওয়াট (৩য় ইউনিট) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের ব্যয় ছিল ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ইসিএ ঋণ নেয়া হয় প্রায় ২২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এজন্য রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি দেয়া হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ। এ পর্যন্ত প্রকল্পটির ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এছাড়া সুদ দেয়া হয়েছে চার কোটি ৩৫ লাখ ডলার। আর ঋণ এখনও বাকি রয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

২০১৫ সালের ২৬ মে রাষ্ট্রীয় ঋণের গ্যারান্টি দেয়া হয়েছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পটির ব্যয় ১৩ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। আর ঋণ নেয়া হয়েছিল ১১ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ছয় কোটি ৮১ লাখ ডলার ও অবশিষ্ট আছে চার কোটি ২৯ লাখ ডলার। এছাড়া প্রকল্পটির ঋণের বিপরীতে এ পর্যন্ত সুদ দেয়া হয়েছে এক কোটি ৮৪ লাখ ডলার।

একই বছর ১৫ মার্চ রাষ্ট্রীয় ঋণের গ্যারান্টি দেয়া হয় বিবিয়ানা-৩ (৪০০ মেগাওয়াট) কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে। এর নির্মাণব্যয় ৪১ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। তবে ঋণ নেয়া হয়েছিল ২৭ কোটি ২৯ লাখ ডলার। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ১৩ কোটি ০৯ লাখ ডলার ও অবশিষ্ট আছে ১৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। এছাড়া প্রকল্পটির ঋণের বিপরীতে এ পর্যন্ত সুদ দেয়া হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ ডলার।

পরের বছর ঘোড়াশাল ৩য় ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্পে ঋণ নেয়া হয়েছিল ইসিএ ঋণ। ওই বছর ৫ নভেম্বর ঋণের বিপরীতে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ছিল ৩৩ কোটি ৪১ লাখ ডলার, যার মধ্যে ঋণ ৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ১৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার ও অবশিষ্ট আছে ১৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। এছাড়া প্রকল্পটির ঋণের বিপরীতে এ পর্যন্ত সুদ দেয়া হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ ডলার।

এদিকে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় ঋণের গ্যারান্টি দেয়া হয় খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে, যার নির্মাণব্যয় ৪১ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। তবে ঋণ নেয়া হয়েছিল ২৮ কোটি ১৪ লাখ ডলার। একইভাবে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় ঋণের গ্যারান্টি দেয়া হয় সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে। এর নির্মাণব্যয় পাঁচ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। আর ঋণ নেয়া হয়েছে পাঁচ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ দুই প্রকল্পে এখনও ঋণ পরিশোধ শুরু হয়নি।

পিডিবির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ডলার সংকট নিয়ে বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছে পিডিবি। ঋণের কিস্তির অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোয় জমা দিলেও তারা ডলার সংকটের কারণে তা পরিশোধ করতে পারছে না। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে, পাশাপাশি দণ্ড সুদও আরোপ করা হবে। তাই ঋণ পরিশোধের বিষয়টি সহজ করতে বিদ্যমান ঋণের বিপরীতে নতুন দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে পুরোনো ঋণ একবারে পরিশোধ করে কিছু রিবেট পাওয়া যাবে। আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হওয়ায় তা পরিশোধে বাড়তি সময় পাওয়া যাবে। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন নিতে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলা হয়েছে।