Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:53 pm

১০৮ ব্রোকারেজের ঘাটতি ৫৮৫ কোটি টাকা

আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ১০৮টি ট্রেকহোল্ডার বা ব্রোকারেজ হাউসের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ অ্যাকাউন্ট) ৫৮৫ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১০৩টি কোম্পানি তাদের ঘাটতি সমন্বয় করলেও এখনও পাঁচটি কোম্পানি ঘাটতি সমন্বয় করেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

তথ্যমতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ২০২২ সালের ২২ মার্চ জারিকৃত নির্দেশনা অনুসারে দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) সব ব্রোকারেজ হাউসকে তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়। সেই নির্দেশনা পালনে পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠানগুলোর সব কার্যক্রম তদন্ত শেষে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পরিমাণের অর্থের ঘাটতি পাওয়া যায়, যার পরিমাণ ৫৮৫ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পরে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হলে এর মধ্যে থেকে ১০৩টি প্রতিষ্ঠান ৫৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা সমন্বয় করে। কিন্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ৪৯ কোটি টাকার ঘাটতি এখনও সমন্বয় করেনি।

প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে সিনহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেড, পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেড, এশিয়া সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং মডার্ন সিকিউরিটিজ লিমিটেড।

এর মধ্যে সিনহা সিকিউরিটিজের ঘাটতি ৯ কোটি ৮২ লাখ ২৪ হাজার টাকা, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডের ঘাটতি এক কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা, ৩৩ কোটি চার লাখ ৬৫ হাজার টাকা ঘাটতি রয়েছে পিএফআই সিকিউরিটিজের। এছাড়া এশিয়া সিকিউরিটিজের ৬২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা এবং মডার্ন সিকিউরিটিজের পাঁচ কোটি ২৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘাটতি রয়েছে বলে জানা গেছে।

হিসাবে ঘাটতি থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো শাস্তির আওতায় আসবে কি নাÑজানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, এর আগে এ বিষয়ে বিএসইসি থেকে কমিশন একটি নির্দেশনা জারি করে। সেখানে যাদের ঘাটতি পাওয়া যায়, তাদের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে ঘাটতি সমন্বয় করতে বলা হয়। সেই সঙ্গে আর যেন ঘাটতি না হয়, সে বিষয়ে বিএসইসি থেকে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। কমিশনের দেয়া সময়ের মধ্যে যারা ঘাটতি সমন্বয় করেছে এবং আর ঘাটতি হয়নি, তাদের কোনো শাস্তি দেয়া হবে না। কিন্তু যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এবং পরে ঘাটতি সমন্বয় করেনি, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে এনফোর্সমেন্ট বিভাগের কাছে কমিশন থেকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান কমিশনের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘাটতি সমন্বয় করলেও পরবর্তী সময়ে আবার ঘাটতি করেছে এবং আবার সমন্বয় করেছে, এভাবে কার্যক্রম পরিচালনে করে আসছে, যা বিএসইসির পরবর্তী পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, তাদেরও শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে তিনি জানান।

এর আগে বিএসইসি গত বছরের ২২ মার্চ গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে কয়েকটি নির্দেশনা দেয়। এই নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জে ব্রোকারেজকে দেয়া লিমিট সুবিধা স্থগিত করা, যোগ্য বিনিয়োগকারী হিসাবে আইপিও কোটা সুবিধা বাতিল করা, স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানার বিপরীতে পাওয়া লভ্যাংশ স্থগিত রাখা এবং ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারীর নিবন্ধন এবং নতুন শাখা ও বুথ খোলা বন্ধ রাখা।

তার আগে ২১ মার্চ বিনিয়োগকারীদের আমানত, অর্থাৎ শেয়ার ও অর্থ সরিয়ে নেয়া তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ এবং বানকো সিকিউরিটিজসহ ২৫টি ব্রোকারেজ হাউসের নিবন্ধন সনদ নবায়ন বন্ধসহ নানা সুযোগ-সুবিধা স্থগিত করা হয়।

এ বিষয়ে বিএসইসি থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এমন কিছু ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে গ্রাহকদের বিনিয়োগ করা অর্থ এবং সংশ্লিষ্ট ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী গ্রাহকদের সিকিউরিটিজের ঘাটতি উদ্ঘাটিত হয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থহানি এবং পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠান (ট্রেকহোল্ডার) বিনিয়োগকারীদের স্বার্থহানি করেছে, তাদের ‘ফ্রি লিমিট সুবিধা’ এবং প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন শেয়ারের ডিভিডেন্ড স্থগিত থাকবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি ও ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারীর নিবন্ধন সনদ নবায়ন স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান নতুন করে কোনো শাখা বা বুথ খুলতে পারবে না।

সংশ্লিষ্ট ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি কর্তৃক গ্রাহকদের বিনিয়োগ করা অর্থ ও সিকিউরিটিজের ঘাটতি সমন্বয় করার পর ন্যূনতম এক বছর ডিএসই এবং সিএসইকে এসব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ তদারকি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিমাসে দুবার সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে থাকা শেয়ার পরীক্ষা করার নির্দেশনাও দেয়া হয়।