Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:53 pm

১০ কোম্পানির শেয়ারদর এক বছরে বেড়েছে ২৮১% পর্যন্ত

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে কিছু দুর্বল কোম্পানি রয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার সারা বছর মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের সঙ্গে দর বৃদ্ধিতে টক্কর দেয়। কোনো কারণ ছাড়া এসব শেয়ারদর বাড়লেও কর্ণপাত করেন না বিনিয়োগকারীরা। স্টক এক্সচেঞ্জগুলো শুধু দর বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে নোটিস দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে। এতে কখনও কখনও দর কিছুটা কমলেও আবার আগের অবস্থানে ফিরে যায়। পরে দর কমলে ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
সম্প্রতি একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো কারণ ছাড়া ১০টি কোম্পানির শেয়ারদর এক বছরের মধ্যে ২৮১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও বর্তমানে এর বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর আগের চেয়ে কমে গেছে। এই তালিকায় থাকা সব প্রতিষ্ঠানই ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত এক বছরে (জুন পর্যন্ত) সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শেয়ারের। বছরের ব্যবধানে ‘জেড’ কাটেগরিতে থাকা এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার সর্বনিম্ন ১২ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে ৪৬ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হতে দেখা যায়। এ হিসাবে এক বছরে প্রতিটি শেয়ারেরদর বেড়েছে ২৮১ শতাংশ।
পরের অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাতের অন্য কোম্পানি দুলামিয়া কটন। একই সময়ে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ১৭ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হতে দেখা যায়। অথচ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ছিল না কোনো ধরনের সংবেদনশীল তথ্য। এক বছরের মধ্যে এই শেয়ারদর বেড়েছে ২৫৬ শতাংশের বেশি। একই অবস্থা তালিকাভুক্ত সাভার রিফ্যাক্টরিজের। এক বছরের মধ্যে এই শেয়ার সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ ২১১ টাকায় লেনদেন হয়। প্রতি শেয়ারে দর বাড়ে ১৮১ শতাংশের বেশি।
অন্যদিকে এই তালিকায় থাকা জুটস স্পিনার্সের শেয়ারদর ৬৯ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে সর্বোচ্চ ১৯০ টাকায় লেনদেন হয়। প্রতিটি শেয়ারে দর বাড়ে ১৭৩ শতাংশ। পরের অবস্থানে রয়েছে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক। এক বছরের মধ্যে এই শেয়ার সর্বনিম্ন ১৩ টাকায় কেনাবেচা হতে দেখা যায়। পরে কোনো কারণ ছাড়া শেয়ারদর ৩৪ টাকা ৫০ পয়সায় পর্যন্ত লেনদেন হয়।
তালিকায় থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমতা লেদারের শেয়ারদর ১৫৭ শতাংশ, মেঘনা পিইটির ১৫৪ শতাংশ, শ্যামপুর সুগারের ১৪২ শতাংশের বেশি এবং ইমাম বাটনের শেয়ারদর কোনো কারণ ছাড়া ১০৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এছাড়া বছরের ব্যবধানে জিলবাংলা সুগারের শেয়ার এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে ৫২ টাকায় পর্যন্ত লেনদেন হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানিগুলোর মূল্য এক বছরের ব্যবধানে শতকরা ৬৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ থেকে ২৮১ দশমিক ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড অবশ্য একাধিকবার কোম্পানিগুলোকে মূল্য বৃদ্ধির কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করলেও তেমন কোনো কাজে আসেনি। গতানুগতিক উত্তরে কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, মূল্য বৃদ্ধির সঠিক কারণ তাদের জানা নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কোম্পানি তালিকাচ্যুতির ঝুঁকিতে রয়েছে। পাশাপাশি ইপিএস মাইনাস এবং অনেক কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে এসব শেয়ারদর ২৮১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়? তাহলে ধরেই নেওয়া যায় যে, ওই কোম্পানিগুলো নিয়ে ব্যাপক সিন্ডিকেশন ও মূল্য কারসাজির ঘটনা ঘটেছে এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড কেবল কারণ দর্শানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কারসাজির ব্যাপারে আমরা আগের চেয়ে কঠিন অবস্থানে গিয়েছি। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক যতই শক্তিধর হোক না কেন প্রমাণ পেলে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস-বৃদ্ধি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে কেউ যদি কারসাজি করে এবং তা প্রমাণিত হয়, সে জন্য অবশ্যই তার শাস্তি হওয়া দরকার। এ বিষয়ে সবার নজরদারি রয়েছে।