Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:11 pm

১০ ডিসেম্বর থেকে এক দফার আন্দোলন: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির গণসমাবেশ থেকে এক দফার আন্দোলন শুরু হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। আমাদের দাবিও পরিষ্কার। আমরা বলেছি, জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ছাড়াও শাওন, নুরে আলম, নয়ন হত্যার প্রতিবাদ ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এসব সমাবেশ করা হবে। এখনও তো আসল ঘোষণা দিইনি, আসল ঘোষণা আসবে ১০ তারিখ। সেদিন থেকে শুরু হবে এক দফার আন্দোলন। গতকাল বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

পুলিশের গুলিতে নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. নয়ম মিয়ার মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের এক দফা ও এক দাবি। তখন সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীরা বলে ওঠেন, ‘শেখ হাসিনা তুই কবে যাবি।’ তখন মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে কোনো কম্প্র্রোমাইজ ও আপস নেই। আপনাদের যেতে হবে, শান্তিপূর্ণভাবে চলে যান।

বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের অনুমতি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করতে দেয়া হবে না, এটা কি কারও বাপের রাজত্ব? ১০ তারিখে এখানেই সমাবেশ হবে। এটা জনগণের ঘোষণা। আমরা অনেক আগে বলেছি, আমরা আইন মানতে চাই। তাই এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছি (সমাবেশের অনুমতির জন্য)।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বারবার বলছি, এখন পর্যন্ত সাতটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছি। প্রতিটি সমাবেশে তারা বাধা দিয়েছে। ওরা কত ভীরু ও কাপুরুষ হলে গাড়ি বন্ধ করে দেয়। এগুলো করেও কি কোনো সমাবেশ বন্ধ করতে পেরেছেন? সমাবেশে মানুষ আরও বাড়ছে। ৩ ঘণ্টার সমাবেশকে আপনারা তিন দিনে রূপ দিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, তারা আমাদের জীবন নিয়ে খেলছে। আমাদের সাতজনকে হত্যা করেছে। আজকে বিক্ষোভে ফেটে পড়তে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, সমস্ত দেশবাসীকে জেগে উঠতে হবে। ক্ষমতা থেকে এমনি এমনি কেউ সরে না, সরাতে হবে। মানুষের সমস্ত শক্তি ও বল দিয়ে এদের চলে যেতে বাধ্য করতে হবে।

এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। সঞ্চালনা করেন যথাক্রমে মহানগর দক্ষিণে এবং উত্তরের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হক। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, বিএনপি প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সারাফত আলী সপু ও মহানগরের সদস্য ইশরাক হোসেন প্রমুখ।

জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় সুশাসনের চিত্র ফুটে উঠেছে: এদিকে ঢাকায় দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ‘সরকারের গভর্ন্যান্সের (সুশাসন) চিত্র’ ফুটে উঠেছেÑমন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ফার্মগেটে হামলায় আহত সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদকে দেখার পর সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন। বিএনপির ভাষ্য, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা রুমানা মাহমুদের ওপর হামলা করেছে।’

গত রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের প্রধান ফটকের সামনে দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেন সহযোগীরা। দুজনই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। এ ঘটনায় দেশজুড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বললেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘চারদিকে তাকালে চোর, চুরি; চারদিকে তাকালে গুণ্ডামি; চারদিকে তাকালে মারামারি। তারা এত কিছু করছেন, এক দিনমজুরকে গুলি করে তার নাড়িভুঁড়ি বের করে দিতে পারছেন। আর আপনাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) সামনে দিয়ে জঙ্গি উধাও হয়ে যাচ্ছে। বুঝতেই পারেন তাদের (সরকার) গভর্ন্যান্স। কোন জায়গায় তারা গভর্ন্যান্সকে নিয়ে এসেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ এক গভীর সংকটে পড়ে গেছে, একেবারে খাদে এসে গেছে। একদিকে অর্থনৈতিক সংকট, আরেক দিকে রাজনৈতিক সংকট। এর সমাধান না করলে এ দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। আমরা এখনও মনে করি, এসব সন্ত্রাস, অত্যাচার-নির্যাতন বাদ দিয়ে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং দেশে সত্যিকার অর্থে একটা অন্তর্বর্তীকালীন কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। অন্যথায় সমস্যা-সমাধানের সম্ভাবনা আমরা দেখি না।’

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশ ও জাতিকে গভীর সংকটে ফেলেছে বলে আমি মনে করি। এটা একটা ক্রিটিক্যাল মোমেন্ট। যদি নির্বাচন ঠিকমতো না হয়, নির্বাচনে যদি জনপ্রতিনিধি সঠিকভাবে নির্বাচিত না হয়, সে দেশ কীভাবে চলবে?’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে শুরু থেকে অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মূল টার্গেট হচ্ছেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও তার স্ত্রী। যেহেতু ২০০৮ সালে টুকু সাহেব নির্বাচন করতে পারেননি, নির্বাচন করেছেন ভাবি। সে জন্য প্রতিহিংসার ব্যাপার আছে। এটা তারা কন্টিনিউ করে গেছে।’