Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:39 am

১০ বছরে বিপিসির নিট মুনাফা ৫৫ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: আন্তর্জাতিক বাজারে নিম্নমুখী থাকলেও দেশে কমানো হয় না জ্বালানি তেলের দাম। যদিও বিশ্ববাজারে বাড়লে দেশে দাম ঠিকই বাড়ে। এভাবেই ইচ্ছেমতো গ্রাহকের পকেট কাটছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ফলে গত ১০ বছরে ৫৫ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করে সংস্থাটি। এর মধ্যে শুধু ২০২১-২২ অর্থবছর কিছুটা লোকসান গুনে দেশে জ্বালানি তেলের একমাত্র আমদানিকারক ও বিপণনকারী সংস্থাটি। তবে সার্বিকভাবে তেল বিক্রি বর্তমানে দেশে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪-এ বিপিসির মুনাফার চিত্র উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সংস্থাটি মুনাফা করেছে চার হাজার ৮৭৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষে এ মুনাফা ছয় হাজার কোটি টাকায় ঠেকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও গত এপ্রিল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশে জ্বালানি তেলের দামের স্বয়ংক্রিয় সমন্বয় পদ্ধতি চালু করেছে বিপিসি। তবে সে পদ্ধতিতেও বিপিসির অধীন বিপণন কোম্পানিগুলোর মুনাফা মার্জিন বাড়ানো হয়েছে।

গত এক দশকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেকটা হ্রাস পাওয়ায় ২০১৪-১৫ অর্থবছর বড় অঙ্কের মুনাফার দেখা পায় বিপিসি। সে অর্থবছর সংস্থাটি মুনাফা করে চার হাজার ১২৬ কোটি আট লাখ টাকা। যদিও এর আগে টানা ছয় অর্থবছর লোকসান করেছিল বিপিসি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আরও কমায় পরের অর্থবছর সংস্থাটির মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৪০ কোটি সাত লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থবছর বিপিসির মুনাফা এক লাফে বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিম্নমুখী থাকায় সংস্থাটির মুনাফার একই ধারা অব্যাহত থাকে পরের অর্থবছর। এতে ২০১৬-১৭ অর্থবছর বিপিসির মুনাফা হয় আট হাজার ৬৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ওই অর্থবছর মুনাফা কিছুটা কমেছিল ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায়। তবে উচ্চ মুনাফার পরও দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম না কমানোয় সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এতে অনেকটা বাধ্য হয়ে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয় ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল।

এর প্রভাবে পরের অর্থবছর বিপিসির মুনাফা কিছুটা হ্রাস পায়। এতে ২০১৭-১৮ অর্থবছর বিপিসির মুনাফা দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এতে বিপিসির মুনাফা আরও হ্রাস পায়। ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছর সংস্থাটি মুনাফা করে চার হাজার ৭৬৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এরপর বিশ্ববাজারে তেলের দাম খুব বেশি ওঠানামা করেনি। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছর পাঁচ হাজার ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা মুনাফা করে বিপিসি।

যদিও করোনা সংক্রমণ শুরুর পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম আবার নিম্নমুখী হতে শুরু করে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি তা রেকর্ড পর্যায়ে নামে। এর প্রভাবে বিপিসির মুনাফা বাড়ে প্রায় ৮৭ শতাংশ। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছর বিপিসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা হয়। ওই অর্থবছর সংস্থাটি ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০২১-২২ অর্থবছর লোকসান করে সংস্থাটি। ওই অর্থবছর লোকসান হয় এক হাজার ৯৮৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজেলের দাম দুই দফা এবং পেট্রোল ও অকটেনের দাম একবার বাড়ানো হয় পরের অর্থবছর। এ সময় দেশে তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তখন জ্বালানি তেলের দাম পড়তির দিকে। এতে সমালোচনার মুখে দেশে তেলের দাম সামান্য কমানো হয়। যদিও সার্বিকভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছর পাঁচ হাজার ৬৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা মুনাফা করে বিপিসি। চলতি অর্থবছর তা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।