১০ বছরে সাড়ে ৩৫ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে আরইবি

হামিদুর রহমান : বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। সম্প্রতি দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হয়েছে। এক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। গত ১০ বছরে দেশের প্রায় সাড়ে ৩৫ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে দেশের ছোট কারখানা থেকে বড় বড় শিল্পকারখানা সবই এখন বিদ্যুতের আওতায় এসেছে।
আরইবির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশের ৪৯ হাজার ৬১টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৪৮৩টি গ্রামে। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫১ হাজার ১৫৭ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেয়া হয়েছে ৫৪ হাজার সাতটি গ্রামে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদ্যুৎ সংযোগ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮ হাজার ৫০৫টি গ্রামে ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৭ হাজার ৮১০টি গ্রামে আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের ৭৪ হাজার ৩৭৮টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংযোগ দেয়া হয়েছে ৮১ হাজার ৪৫২টি গ্রামে ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে ৮২ হাজার ৩০৫টি গ্রামে। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে এসে গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে ৮৪ হাজার ৫৪৪টি গ্রামে। অর্থাৎ ১০ বছরে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দিয়েছে আরইবি।
এদিকে সরকার শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করলেও এখনও কম দামে ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। তবে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন হলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরও বড় অবদান রাখবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
আরইবি’র বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছিল প্রায় ৯০ লাখ ৮৬ জনকে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩ লাখ ৯০ হাজার ২২৭ জনে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে গ্রাহক সংখ্যা বাড়েনি। তবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সুবিধাভোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক কোটি ১৯ লাখ ৮৯ হাজার জনে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদ্যুৎ সংযোগ আওতায় এসেছে প্রায় এক কোটি ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার জন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় এক কোটি ৯০ লাখ ৯৮ হাজার জনে, ২০১৭-১৮ অর্থবছের দুই কোটি ২৯ লাখ ৪৯ হাজার জন ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় দুই কোটি ৬৫ লাখ জনে। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে প্রায় দুই কোটি ৯০ লাখ গ্রাহককে। পরবর্তী অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশব্যাপী কভিড-১৯-এর প্রভাব পড়ায় দেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ খুব একটা বাড়েনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রামে বিদ্যুৎ যাওয়ার ফলে কৃষি অর্থনীতিতে পড়েছে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব। কৃষি উৎপাদনে বেড়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার। এতে নতুন নতুন জীবিকার পথ তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করে ধানছাঁটা কল, তেল ভাঙানোর মেশিন, ছোট ছোট লেদ কারখানা ও পোলট্রি শিল্পের ছোট ছোট খামার গড়ে উঠেছে। এতে মানুষের আয়-রোজগার যেমন বেড়েছে, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতির পরিসরও উন্নত হয়েছে।
আরইবি’র বার্ষিক প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশে এক লাখ ৩৯ হাজার ২৭৪টি শিল্পকারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৪২ হাজার ২৭২টিতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৭টি শিল্পকারখানা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক লাখ ৬৪ হাজার ৯০৭টি শিল্পকারখানা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৮টি শিল্পকারখানা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক লাখ ৬২ হাজার ৪৩৫টি শিল্পকারখানা। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছে এক লাখ ৬৯ হাজার ২১০টি শিল্পকারখানা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক লাখ ৬২ হাজার ৬১টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক লাখ ৭৯ হাজার ৩৩টি আর ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই লাখ ৩১ হাজার ৫০২টি শিল্পকারখানা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
জানতে চাইলে আরবির চেয়ারম্যান মোহা. সেলিম উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় আজকে আমাদের পল্লী বিদ্যুতের এ অবস্থান। দেশের প্রায় প্রত্যেকটা গ্রাম এখন বিদ্যুতের আওতায়। এতে গ্রামীণ মানুষের জীবন বদলে গেছে। অনেক কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব খাতে পরিবর্তন এসেছে। এ অবদান বিআরইবি’র সব কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার। সবার পরিশ্রমেই দেশে পল্লী বিদ্যুৎ খাত এগিয়ে গেছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০