১০ ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে ডলার-সংকট মোকাবিলায় ডলারের অভিন্ন দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে কিছু ব্যাংক আগ্রাসীভাবে ডলার কেনাবেচা করছে। এ ধরনের কারসাজির অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত নামছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আগামীতে যাতে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা না করে সে বিষয়ে সব ব্যাংকের এমডিকে সতর্ক করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ডলার বেচাকেনায় যেসব ব্যাংক কারসাজি করেছে তাদের বিরুদ্ধে পরিদর্শন করা হবে। পরিদর্শনে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা যায়, ডলার বেচাকেনায় কারসাজির সঙ্গে জড়িত ১০ ব্যাংকের মধ্যে প্রচলিত ধারার ৭টি ও ইসলামি ধারার ৩টি ব্যাংক রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব ব্যাংকের এমডিকে জরুরি ভিত্তিতে ডেকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বাড়তি দরে ডলার বেচাকেনার কারণ জানাতে চাওয়া হয়। ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি হলে ব্যক্তিগতভাবে জরিমানা করার হুশিয়ারি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে এমডি ছাড়াও ডলার বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত ট্রেজারি প্রধান বা অন্য কোনো কর্মকর্তাকেও জরিমানা করা হবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চের পর থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তাতে সংকট আরও প্রকট হয়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন-অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন একক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ওপর। এরপর দুই সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ শুরু করেন। তবে কিছু ব্যাংক ডলারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে ডলার কেনাবেচা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তথ্য মতে, ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা দরে প্রবাসী রেমিট্যান্স কেনার কথা জানালেও ১১৩ টাকা পর্যন্ত দরে কিনছে কোনো কোনো ব্যাংক। এভাবে কেনা ডলার আমদানিকারকের কাছে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। যদিও ব্যাংকগুলো কাগজে-কলমে ১০৭ থেকে ১০৮ টাকার বেশি দেখাচ্ছে না। বাড়তি অংশ কখনও অনানুষ্ঠানিকভাবে সরাসরি এক্সচেঞ্জ হাউসের প্রতিনিধিকে পরিশোধ করা হচ্ছে। কখনও ‘অন্যান্য খাতের ব্যয়’ দেখানো হচ্ছে। একইভাবে আমদানিকারকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিয়ে তা ‘অন্যান্য খাতের আয়’ হিসেবে সমন্বয় করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকায় ডলার বিক্রি কমানো হয়েছে। তাই বলে এক রকম দর ঘোষণা করে আরেক দরে বেচাকেনা আইনসিদ্ধ নয়। আবার ঘোষণার অতিরিক্ত দর যে প্রক্রিয়ায় পরিশোধ করা হচ্ছে, তা মানিলন্ডারিং আইনে অপরাধ। যে কারণে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে তারা যাতে ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার বেচাকেনা না করে। ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার কেনাবেচা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে, এমন বার্তা দেয়া হয়।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের এমডি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি কমিয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ডলারের দর না বাড়িয়ে সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। তাই ব্যাংকগুলো এ পথে হাঁটছে।

এদিকে ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার না কিনতে ব্যাংকগুলোকে আবার অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন-এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন-বাফেদা। গত বৃহস্পতিবার এক যৌথ সভায় এ অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে রপ্তানি বিল নগদায়নে ১০৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৫ টাকা করা হয়েছে। তবে রেমিট্যান্সে ১০৭ টাকা অপরিবর্তিত থাকবে। আর রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল নগদায়নের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০