নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে আমদানির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়ছে না রপ্তানি। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড পরিমাণ বাড়ছে, যা চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই হাজার ৭৫৭ কোটি ডলারে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারে, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময় ছিল এক হাজার ৮০১ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
আমদানির তুলনায় পণ্য রপ্তানি কম হওয়ায় বরাবরই বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতিতে থাকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। আর এতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে বড় ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বড় বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছর জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৪১ দশমিক ৪২ শতাংশ। আলোচিত দশ মাসে রপ্তানি থেকে দেশ আয় করেছে চার হাজার ১১০ কোটি ডলার। পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছে ছয় হাজার ৮৬৬ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় থেকে রপ্তানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় দুই হাজার ৭৫৬ কোটি ডলার।
এই ১০ মাসে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৭৯৫ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় হয়েছে এক হাজার ১১৪ কোটি ডলার। সেই হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩১৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২১৫ কোটি ডলার।
চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে এ ঘাটতির (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলারে। আগের অর্থবছরে একই সময় ঘাটতি ছিল ১৬৫ লাখ ডলার।
সামগ্রিক লেনদেনে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭১ কোটি ডলারে। গত অর্থবছরের একই সময় এ সূচকে ৭৪৯ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই থেকে মে পর্যন্ত এক হাজার ৯১৯ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম। দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রæয়ারি ২৮৭ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের একই সময় তা বেড়ে ৩৮৮ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।