নিজস্ব প্রতিবেদক: গুলশানের আন্তর্জাতিক মানের আবাসিক হোটেল লেকশোর। পাঁচ তারকা এ হোটেলের বিরুদ্ধে ১০ মাস ধরে কোন প্রকার ভ্যাট না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অভিযানে এর প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া হোটেল বার থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মদ আটক করা হয়েছে।
অপরদিকে, অভিযানে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পেয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা দল। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) ভ্যাট গোয়েন্দার একটি বিশেষ দল হোটেল লেকশোর অভিযান পরিচালনা করেন। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ড. মইনুল খান জানান, হোটেল লেকশোর বিরুদ্ধে ভ্যাট পরিশোধ ছাড়াই ব্যবসা করার অভিযোগ উঠে। পরে এনবিআরের নির্দেশে ভ্যাট গোয়েন্দা তথ্য নেয়। এতে দেখা যায়, হোটেলটি চলতি বছরে ভ্যাট পরিশোধ থেকে বিরত রয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ভ্যাট গোয়েন্দার একটি বিশেষ দল গুলশানের হোটেল লেকশোরে অভিযান করে। ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক নাজমুন্নাহার কায়সার অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এতে র্যাব এর একটি টহল দল সহযোগিতা করে। অভিযানে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, অভিযানে লেকশোর হোটেলের বারে ৩৪৯ বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে। যার কোন বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি হোটেল কর্তৃপক্ষ। এগুলো আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, হোটেল প্রাঙ্গন থেকে আবাসিক সেবা বিক্রয়ে প্রকৃত হিসাব উদ্ধার করা হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে হোটেল কর্তৃক দাখিলকৃত (২০১৯ সালে) মাসিক ভ্যাট রিটার্নের সাথে ব্যাপক গরমিল পাওয়া গেছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। উদ্ধার করা তথ্য বলছে, ক্রেতার নিকট থেকে ভ্যাট সংগ্রহ করেছে লেকশোর। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ তা সরকারের কোষাগারে জমা দেয়নি।
অপরদিকে, লেকশোর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কোন ভ্যাট রিটার্ন দেয়া থেকে বিরত রয়েছে। গত ১০ মাসে কোন ভ্যাট পরিশোধ করেনি। আইন অনুসারে প্রতি মাসের রিটার্ন পরের মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

হোটেল প্রাঙ্গন থেকে উদ্ধারকৃত তথ্যাদি আড়াআড়ি যাচাই করে ভ্যাট ফাঁকির হিসাব বের করা হবে। এ বিষয়ে আরো তদন্ত করা হবে এবং ভ্যাট আইন ও অন্যান্য আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হোটেল লেকশোর প্রতিমাসে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে ভ্যাট পরিশোধ করেছে। অথচ হোটেলের বিক্রয় অনুযায়ী প্রতিমাসে কোটি টাকা ভ্যাট প্রযোজ্য হয়। অভিযানে জব্দ করা কাগজপত্র যাচাই বিপুল পরিমাণ ফাঁকি উদ্ঘাটন হবে।
সূত্রমতে, ঢাকাকে ভিন্নভাবে আবিষ্কারের সুযোগ করে দিতে রুফটপ সুইমিংপুল ও রুফটপ রেস্টুরেন্টের সুবিধা নিয়ে ১৯৯১ সালে রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেল যাত্রা শুরু করে। আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদানকারী এই হোটেলের খাবার পরিবেশনা আগত অতিথিদের কাছে বিশেষ সুনাম অর্জন করেছে। লেকশোর ট্যুর ও টেভেলসের মাধ্যমে হোটেলে অবস্থানরত অতিথিরা দেশে-বিদেশে নানা ধরনের ট্যুরে ঘুরে বেড়াতে পারেন। এছাড়া হোটেলটির রয়েছে বাই সাইকেল রেন্ট সুবিধা, যা বিদেশি পর্যটকদের শহর ঘুরে দেখবার ভ্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করে।