Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 8:50 pm

১০ হাজার মানুষের ভরসা একটি নৌকা

প্রতিনিধি, শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের ছিডুর টেক এলাকার নদীটি পাড় হয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন অন্তত ১০ হাজার লোকজন। তাদের পারাপার করছে একটিমাত্র খেয়া নৌকা। বৈরী আবহাওয়া কিংবা মাঝি অসুস্থ থাকলে বিপাকে পড়েন এ অঞ্চলের মানুষ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ মানুষগুলোর দুর্ভোগে পাশে দাঁড়াননি কেউ। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে নদীতে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

উপজেলার চর কুমারিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চর ফেলিজ (ছিডুর টেক) এলাকা দিয়ে বয়ে চলেছে মেঘনা নদীর একটি শাখানদী। এর একটি অংশ ভেদরগঞ্জ হয়ে চাঁদপুর জেলার মেঘনা নদীর হাইমচর অংশে মিলিত হয়েছে। গ্রীষ্ম থেকে বসন্ত পুরো ১২ মাস এই নদীতে পানি থাকে। নদীটির পূর্ব পাড়ে রয়েছে ঈশানবালা, চর কুমারিয়া, আরশিনগর, চর জালালপুর, আলাউলপুর ইউনিয়নসহ পাঁচটি ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে পাড় হতে হয় এই নদী।

পূর্বপাড়ের কাছাকাছি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় নদীটির পশ্চিম পাড়ে নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরকুমারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বাহেরচর মাদরাসা, এমএ রেজা সরকারি কলেজে পড়াশোনা করেন শিক্ষার্থীরা। পূর্বপাড়ের কৃষকরা কৃষিপণ্য পরিবহন করেন অন্তত পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে। কেননা নদীটি পাড় হওয়ার জন্য রয়েছে একটি মাত্র খেয়া নৌকা। সকাল ৮টা থেকে চলাচল শুরু হয়। চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। অনেক সময় পারাপারের একমাত্র নৌকাটি ডুবে গিয়ে ভোগান্তির কারণ হচ্ছে মানুষের।

সরেজমিন দেখা যায়, অন্তত ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে নদীটি দিয়ে একটিমাত্র নৌকায় পাড় হচ্ছেন লোকজন। নৌকাটিতে ১০ জনের বেশি উঠলেই ডুবুডুবু অবস্থা। তাই অতিরিক্ত ব্যক্তিদের নৌকা থেকে নামিয়ে দিয়ে অপর পাড়ের উদ্দেশ্যে ছুটছেন মাঝি। বাকিরা পারাপার হতে ওপার থেকে নৌকা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।

দক্ষিণ চর ফেলিজ এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি এখন কলেজে পড়াশোনা করছেন। পড়াশোনার জন্য নদীটি পাড় হতে যে বিড়ম্বনা পোহাতে হয় তাকে, সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাগুলো বর্ণনা করছিলেন।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পূর্বপাড়ের যে শিক্ষার্থীরা আছে তারা সবাই পড়াশোনার তাগিদে নদীর ওই পাড়ে যায়। মাঝেমধ্যে নদীতে যখন বেশি পানি থাকে, তখন ঢেউয়ের কারণে নৌকা ডুবে অনেকের বই-খাতা ভিজে যায়। এমনকি আমি যখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিই, তখন নদীতে পড়ে গিয়েছিলাম। পরে বাড়ি গিয়ে নতুন পোশাক পরে পরীক্ষার হলে গিয়েছিলাম।’

স্থানীয় বাসিন্দা কাজী মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের পারাপারের জন্য মাত্র একটি নৌকা। যখন নৌকার মাঝি অসুস্থ থাকে কিংবা বাড়িতে চলে যায়, তখন আমাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। এখানে একটি সেতু হওয়া জরুরি।’

এলাকাবাসীর ভোগান্তি অবসানে একটি সেতুর দাবি জানান খোদ খেয়াঘাটের মাঝি হোসেন মিজিও। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আমি এই ঘাটে লোকজন পারাপার করছি। তবে আমি যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি, নৌকা বাইতে পারি না; তখন এই এলাকার লোকজনের ভীষণ কষ্ট হয়। ছোট ছোট বাচ্চারা ঠিকমতো স্কুল-মাদরাসায় যেতে পারে না। সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ, এখানে একটি সেতু করা হোক।’

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার রেজাউল হক বকাউল বলেন, ‘ছিডুর টেকের নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য অনেকবার আবেদন জানিয়েছি। বেশ কয়েকবার এ জায়গায় সয়েল টেস্ট করা হয়েছে। কিন্তু কী কারণে সেতুটি হচ্ছে না, বুঝতে পারছি না। এলাকাবাসীর স্বার্থে এখানে একটি সেতুর খুবই প্রয়োজন।’

তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি সেতু নির্মাণ করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলীকে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে। ওই স্থানে সেতুর জন্য প্রস্তাব দেয়া থাকলে তার অগ্রগতির বিষয়ে কাজ করা হবে। যদি প্রস্তাব না দেয়া থাকে, তাহলে নতুন প্রকল্পে সেতুটি অন্তর্ভুক্ত করে খুব শিগগির কাজ শুরু করা হবে।’