ইসমাইল আলী: চলতি বছর শুরুতে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ২৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। ২০৫০ সালে তা বাড়িয়ে এক লাখ ১১ হাজার মেগাওয়াট করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ‘সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মাস্টারপ্ল্যান (আইইপিএমপি) ২০২৩’-এ। অর্থাৎ ২৮ বছরে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে প্রায় ৩৭৩ শতাংশ। বিলাসবহুল এ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেই ব্যয় করতে হবে প্রায় ১১৯ বিলিয়ন ডলার।
মাস্টারপ্ল্যানের তথ্যমতে, ২০২৩ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা যোগ করতে হবে ২৫ হাজার মেগাওয়াট। তবে এর মধ্যে বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে চলে যাবে। এতে ২০৩০ সাল শেষে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে ৪১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা গড়ে তুলতে আট বছরে বিনিয়োগ করতে হবে ২৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।
আট বছরে গ্যাসের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ব্যয় হবে ছয় বিলিয়ন ডলার, কয়লার কেন্দ্রগুলোর জন্য ১০ দশমিক ৪ বিলিয়ন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ছয় দশমিক ১ বিলিয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির কেন্দ্রগুলোর জন্য তিন দশমিক ১ বিলিয়ন এবং তেলচালিত কেন্দ্রগুলোর জন্য শূন্য দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া অ্যামোনিয়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে দুই দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। যদিও এ বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে ২০৩০ সালের পর।
পরবর্তী ১১ বছরে (২০৩১ থেকে ২০৪১ সাল) বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা যুক্ত হবে ৪৪ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। তবে পুরোনো বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে যাওয়ায় ২০৪১ সাল শেষে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে ৭৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। বাড়তি সক্ষমতা যোগ করতে ২০৩১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে বিনিয়োগ করতে হবে ৫১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
বাড়তি সক্ষমতা যোগ করতে ১১ বছরে গ্যাসের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ব্যয় হবে ১৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, কার্বন ক্যাপচার স্টোরেজ কেন্দ্রগুলোর জন্য ব্যয় হবে ছয় দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, কয়লার কেন্দ্রগুলোর জন্য পাঁচ দশমিক ৫ বিলিয়ন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সাত দশমিক ১ বিলিয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির কেন্দ্রগুলোর জন্য ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন এবং তেলচালিত কেন্দ্রগুলোর জন্য এক দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া অ্যামোনিয়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে দুই দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ও হাইড্রোজেনচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে এক দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে ২০৫০ সাল নাগাদ অর্থাৎ শেষ ৯ বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে ৪১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। তবে বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে যাওয়ায় ২০৫০ সালে উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে এক লাখ ১১ হাজার মেগাওয়াট। বাড়তি সক্ষমতা গড়ে তুলতে ২০৪২ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হবে ৩৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
নতুন উৎপাদনে আসা গ্যাসের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ব্যয় হবে আট দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, সিসিএস প্রযুক্তির জন্য লাগবে পাঁচ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, নবায়নযোগ্য জ্বালানির কেন্দ্রগুলোর জন্য ২০ দশমিক ৫ বিলিয়ন এবং তেলচালিত কেন্দ্রগুলোর জন্য তিন দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া হাইড্রোজেনচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে এক দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
যদিও বিশাল এ বিনিয়োগ আসবে কোথা থেকে, তা মাস্টারপ্ল্যানে বলা হয়নি। এছাড়া এ ধরনের বিলাসী বিনিয়োগ পরিকল্পনাকে দেশের জন্য বোঝা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জানতে চাইলে বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোটের (বিডব্লিউজিইডি) সদস্য সচিব হাসান মেহেদী শেয়ার বিজকে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিলে বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কমে যাবে। কারণ প্রতি কিলোওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে বর্তমানে গড়ে এক হাজার ৪৮০ ডলার। অথচ প্রতি কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে গড়ে ব্যয় হয় ৬২৩ ডলার। অর্থাৎ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রায় আড়াইগুণ বিনিয়োগ ব্যয় দরকার।
তিনি আরও বলেন, সৌর বা বায়ু বিদ্যুতে প্রাকৃতিক শক্তির ব্যবহার হয়। কিন্তু অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে। এছাড়া জ্বালানি আমদানি করতে ডলার লাগবে। এজন্য অবকাঠামো নির্মাণেও পৃথক বিনিয়োগ লাগবে। আর নবায়নযোগ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতে ক্যাপাসিটি চার্জ নেই। তাই অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও বিনিয়োগ চাহিদা কমাতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রতি জোর দেয়া উচিত। এজন্য মাস্টারপ্ল্যানটি দ্রুত বাতিল করে নতুন পরিকল্পনা নেয়া দরকার।
উল্লেখ্য, ডলার সংকটে বিদ্যমান বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার বড় অংশই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। গত দেড় বছর ধরে এটা নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। তবে বসিয়ে রেখে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ ঠিকই গুনতে হচ্ছে।