মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: এতদিন প্রতিষ্ঠানগুলোর ঠিকানা খুঁজতেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এখন ১১ কোম্পানির ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছে না খোদ ডিএসই কর্তৃপক্ষও। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুই শতাংশ শেয়ার ধারণের চিঠিও দিতে পারেনি।
ডিএসইর ওটিসি মার্কেটের বাংলাদেশ ইলেকট্রিসিটি মিটার কোম্পানি বেমকো, চিক টেক্সটাইল, রাসপিট ডাটা, রাসপিট ইনকরপোরেশন, এম হোসেন গার্মেন্টস, ফার্মাকো, আমান সি ফুড, জার্মান বাংলা ফুড, মেটালিক্স, রাঙামাটি ফুড ও সালেহ কার্পেটের ঠিকানা খুঁজছে।
এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের চার কোটি ৮৭ লাখ শেয়ার রয়েছে, আনুমানিক যার বাজারমূল্য ৪০০ কোটি টাকার বেশি। যে কারণে এখনও এসব কোম্পানির খোঁজ করেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন, এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্বই নেই। এর কোথাও আবাসিক বাসা, আবার কোথাও বেসরকারি ক্লিনিক বা অন্য প্রতিষ্ঠান।
ডিএসইতে রাসপিট ডাটা ও রাসপিট ইনকরপোরেশনের প্রোফাইলের ঠিকানা অনুযায়ী রাজধানীর গ্রীন রোডে ১৯ এ কে কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তানভির জালালের চেম্বার। এছাড়া ওই ভবনের চতুর্থ তলায় অন্য দুটি কোম্পানির অফিস রয়েছে।
সেখানে কর্মরতরা জানান, তারা তিন বছরের বেশি সময় চাকরি করছেন। কিন্তু ভবনটিতে কখনও ওই দুই কোম্পানির অফিস দেখেননি। তারা বলেন, কোম্পানির খোঁজে প্রায়ই বিনিয়োগকারী ও পুলিশ আসে। কখনও সাংবাদিকরা এসে কোম্পানির খোঁজ-খবর জানতে চান। যে কারণে ঝামেলা এড়াতে আগের ভাড়াটিয়া এই ফ্লোর ছেড়ে সাততলায় চলে গেছেন।
অন্য কোম্পানি ফার্মাকো। ডিএসইতে কোম্পানিটির ঠিকানা দেওয়া আছে ৫০/১ পুরানা পল্টন লাইন, ঢাকা। কিন্তু সেখানেও এ কোম্পানির কোনো কার্যালয় নেই। সেখানে গিয়ে আশাহত হয়ে প্রায়ই ফিরে আসেন বিনিয়োগকারীরা।
একই অবস্থা বস্ত্র খাতের এম হোসেন গার্মেন্টসের। ডিএসইতে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, কোম্পানির ঠিকানা রাজধানীর বনানীতে। কিন্তু সেখানে এ কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব নেই।
একই অবস্থা সালেহ কার্পেটের। ঠিকানা অনুযায়ী বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে কোম্পানিটির কার্যালয়। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে প্রায়ই সেখানে হাজির হন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বর্তমানে সেখানে আর এ কোম্পানির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ২০১৪ সালে সর্বশেষ এ কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অন্যদিকে ওয়েবসাইটে দেওয়া ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যায়নি বেমকো ও চিক টেক্সটাইল কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে। এ দুই কোম্পানির মধ্যে পুঁজিবাজারে চিক টেক্সটাইলের মোট এক কোটি ২৫ লাখ শেয়ার রয়েছে, যার মধ্যে পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৫০ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ২৬.৫৬ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের রয়েছে ২৩ শতাংশ শেয়ার। অন্যদিকে বেমকোর বাজারে মোট শেয়ার রয়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজার। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৪৪ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ৩১ ও পরিচালকদের কাছে রয়েছে ২৫ শতাংশ শেয়ার।
উল্লেখ্য, ওটিসিতে তালিকাভুক্ত রয়েছে মোট ৬৬টি কোম্পানি। এর মধ্যে তালিকাভুক্তির পর একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি ১৩ কোম্পানির। এছাড়া অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি ১১ কোম্পানির এবং নামমাত্র লেনদেন হয় ৩৪ কোম্পানির শেয়ার।
এ নিয়ে আলাপ করলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এসব কোম্পানি খুঁজে বের করার ব্যাপারে ডিএসইরও যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি আমাদেরও রয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। যথাসময়ে এ নিয়ে ভাবা হবে।
একই বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান বলেন, এসব কোম্পানির বিষয়ে কী করা যায়Ñতা নিয়ে আমরা বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করব। এরপরই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সম্প্রতি পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের মোট শেয়ারের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। পাশাপাশি স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত অন্যসব পরিচালকের দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র অনুযায়ী, ওটিসি বিভাগ ৬৫টি কোম্পানির মধ্যে ৫৪টিকে এ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছে। ১১টি কোম্পানির অস্তিত্ব না থাকায় তাদের চিঠি দেওয়া সম্ভব হয়নি
জানা গেছে, এ মার্কেটে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৩টির পরিচালকদের মোট পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের কম শেয়ার ধারণ রয়েছে।
কোম্পানিগুলো হচ্ছে: মেঘনা শ্রিম কালচারে ২৭.৮৪ শতাংশ, মিতা টেক্সটাইলে ২৪.০৫, মডার্ন ইন্ডাস্ট্রিজে ১৫.৪৯, পারফিউম কেমিক্যালে ২১.৩৮, ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনালে ২৫.৫৫ ও ফনিক্স লেদার কমপ্লেক্স পরিচালকদের কাছে রয়েছে ২৬.৪৫ শতাংশ। এছাড়া এপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিল পরিচালকদের রয়েছে ২৩.৪৪, আশরাফ টেক্সটাইল মিলে ২৫.১৫, বাংলাদেশ ইলেকট্রিসিটি মেটারে ২৫, বেঙ্গল বিস্কুটে ১৯.৩৬, ঢাকা ফিশারিজে ১২.০৫, দ্য ইঞ্জিনিয়ার্সে ১৯.৯১, এক্সেলসিওর শুজে ৬.২৩ ও গাছিহাটা এগ্রিকালচারে ২৬.৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ২০এ অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকের (স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত) মোট পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করবেন। যা ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ (সিডিবিএল) কোম্পানিগুলোর এই কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করবে।