Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 8:58 pm

১১ বছরেও শেষ হচ্ছে না পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ উন্নয়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০০৭ সালে। প্রায় ১১ বছর পেরুলেও এখনও শেষ হয়নি প্রকল্পটির কাজ। ঠিকাদার নিয়োগে বিলম্ব আর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির বাজারদর বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে একবার বাড়ানো হয়েছে ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন ব্যয়। এবার দ্বিতীয় দফা ব্যয় বাড়ছে প্রকল্পটির। এতে দুই দফায় ব্যয় বেড়ে গেছে শতভাগেরও বেশি।

সম্প্রতি প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০০৭ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনকালে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রথমবার সংশোধনের সময় তা বেড়ে দাঁড়ায় ২১৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আর দ্বিতীয় দফা এ ব্যয় আরও বেড়ে হয়েছে ৩১৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই দফায় পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন ব্যয় বাড়ছে ১৭২ কোটি সাত লাখ টাকা বা ১১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।

২০০৭ সালের জুলাইয়ে অনুমোদিত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১০ সালের জুন। এর পর দফায় দফায় তা বেড়ে হয় ২০১৭ সালের জুন। আবার তা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে পরিকল্পনা কমিশনে। পরে তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেকে) উত্থাপন করা হবে।

রেলওয়ের তথ্যমতে, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ উন্নয়ন’ শীর্ষক আমব্রেলা প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০০৭ সালে। এতে জেবিআইসির (বর্তমানে জাইকা) অর্থায়নের কথা ছিল ৭৭৮ কোটি টাকা। আর সরকারি তহবিল থেকে ৩৭১ কোটি সরবরাহ করা হবে। মোট এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই আমব্রেলা প্রকল্পের আওতায় মোট পাঁচটি উপ-প্রকল্প রয়েছে। তার মধ্যে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ উন্নয়ন উপ-প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

১৯৪৭ সালে নির্মিত ওয়ার্কশপটি উন্নয়নের মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলের রোলিং স্টকের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণপূর্বক ইঞ্জিন-কোচের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করাই লক্ষ্য ছিল। এজন্য প্রকল্পটির আওতায় পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের ভবনসমূহ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ড্রেনেজ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পুনর্বাসন, ওয়ার্কশপ ট্রেনিং ইউনিট উন্নয়ন প্রভৃতি কাজ সম্পাদন করার লক্ষ্যে মোট ১৪৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩২ কোটি ৪০ লাখ ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১১৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য উপ-প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। বাস্তবায়ন পর্যায়ে মেয়াদকাল প্রথমবার ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর, ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত দ্বিতীয়বার ও ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তৃতীয়বার বাড়ানো হয়।

আমব্রেলা প্রকল্পের আওতায় জাইকার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের মোট ১২ হাজার ৯১৬ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন ঋণচুক্তি সম্পাদিত হয়। এই ঋণ সহায়তার মধ্যে আলোচ্য উপ-প্রকল্পের অনুকূলে এক হাজার ৮৩৯ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন সংস্থান ছিল। ঋণচুক্তির মেয়াদ ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত এবং ঋণ কার্যকারিতার মেয়াদ ২০১৭ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত ছিল। দুবার দরপত্র আহ্বান করা হলেও কারিগরিভাবে কোনো ঠিকাদার না পাওয়ায় ওই ঋণ আলোচ্য প্রকল্পে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি।

পরে প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে বৈদেশিক অর্থায়নের ধরন পরিবর্তন করে জাইকার ঋণের স্থলে ডিআরজিএ ও ডিআরজিএ-সিএফ থেকে প্রকল্পের অনুকূলে ১৭৫ কোটি টাকা অর্থায়নের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও জাপান সরকার সম্মত হয়। এবার বৈদেশিক অর্থায়ন অপরিবর্তিত রেখে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।

তথ্যমতে, প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে ৪৯টি বিভিন্ন আইটেমের মেশিনারি ও প্লান্টস সংগ্রহ ও পুরনো মেশিনারি প্রতিস্থাপন, ১০৮টি বিভিন্ন আইটেমের বৈদ্যুতিক মেশিনারি ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, দুই কিলোমিটার ট্র্যাক পুনর্বাসনের জন্য ৫৩৯ টন ৭৫ পাউন্ড রেল, দুই হাজার ঘনমিটার ব্যালাস্ট ও অন্যান্য ফিটিংস সংগ্রহ এবং বিভিন্ন ধরনের পূর্ত কাজ, যেমনÑবিভিন্ন শপের শেড, ড্রেনেজ সিস্টেম, রাস্তা পুনর্বাসন, ডিপ টিউবওয়েল ও ওয়াটার ট্যাংক স্থাপন প্রভৃতি।

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনের সময় প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০১৭ সালের জুন। পরে তা আরও এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন করা হয়। তবে এবার দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানতে চাইলে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. মনজুর-উল-আলম চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, প্রকল্পটির কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে বেশ কয়েক বছর পেরিয়ে যাওয়ায় প্রকল্পটির বিভিন্ন প্যাকেজে ভেরিয়েশন দেখা দিয়েছে। এতে ঠিকাদারের বিল পরিশোধ বিলম্বিত হচ্ছে। এজন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে। তবে এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে।