১১ বছরের মধ্যে কলমানির গড় সুদহার সর্বোচ্চ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলার বিক্রি, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচন নীতির কারণে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট বেড়েছে। তাই অনেক ব্যাংককে এখন ধার করে দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। ফলে প্রতিদিনই চড়ছে আন্তঃব্যাংক কলমানির সুদহার।

গতকাল কলমানির সর্বোচ্চ গড় সুদ উঠেছে ৮ দশমিক ০৭ শতাংশে, যা গত ১০ বছর ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ গড় সুদহার উঠেছিল। এর পর কখনোই গড় সুদহার ৮ শতাংশে উঠেনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, খেলাপিঋণ বৃদ্ধি, প্রত্যাশিত মাত্রায় আমানত সংগ্রহ না হওয়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি এবং সরকারকে ঋণ দেয়ার কারণে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার সংকট বেড়েছে। ফলে আন্তঃব্যাংক কলমানি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়মিত ধার করে চলতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে।

সংকটের সময় এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক, আবার ব্যাংক থেকে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িক সময়ের জন্য টাকা ধার নেয়। সাধারণত এক দিনের জন্য এই ধার নেয়া হয়। এই ধার দেয়া-নেয়া কার্যক্রম সম্পন্ন হয় যে ব্যবস্থায় সম্পন্ন হয় তা আন্তঃব্যাংক কলমানি বাজার নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের শেষ দিকে কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের খবর জানাজানি হওয়ার পর ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়। এরপর সংশ্লিস্ট ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তুলে নিতে থাকেন গ্রাহকরা। আবার সে সময় ব্যাংকগুলোতে নতুন আমানত আসাও কমে যায়। এতে ওই ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়, যা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এতে জীবযাত্রার খরচ বেড়েছে। কিন্তু একই সময় মানুষের আয় খুব একটা বাড়েনি। আবার উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে ব্যাংকে আমানতের সুদের হার যেভাবে বাড়ার কথা সেভাবে বাড়েনি। এতে ব্যাংকগুলো প্রত্যাশিত মাত্রায় আমানত পাচ্ছে না। আবার আগের বিতরণ হওয়া ঋণ সময়মতো ফেরত আসছে না। এর মধ্যেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেয়া বাড়িয়েছে সরকার। ফলে চলমান নগদ টাকার সংকট আরও বেড়েছে। আর এই সংকট সামাল দিতে আন্তঃব্যাংক কলমানির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে অনেক ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গতকাল আন্তঃব্যাংক কলমানিতে ১ থেকে ৯০ দিন মেয়াদি মোট ৫ হাজার ৯৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যার গড় সুদহার উঠেছে ৮ দশমিক ০৭ শতাংশ।

এর মধ্যে এক দিন মেয়াদি ধারের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। এর সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৫০ এবং সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। গড় সুদের হার উঠে ৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। আন্তঃব্যাংক কলমানির সঙ্গে শর্ট নোটিশে ধারের সুদের হারও বাড়ছে। গতকাল ৩ থেকে ১৪ দিন মেয়াদি ধারের সর্বোচ্চ সুদের হার ছিল ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

এদিকে গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের স্বল্পমেয়াদি ধার করেছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক। রেপো, তারল্য সহায়তা ও স্টান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি উপকরণের আওতায় ১৯ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের দিন এই ধারের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পলিসি রেট বাড়িয়েছে। গত মাসে নীতিগত সুদহার ৬.৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭.২৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়। সাধারণত পলিসি রেট বাড়ালেই কল মানি সুদহার বেড়ে যায়।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, পলিসি রেট বাড়ার রিফ্লেলেকশন হচ্ছে কল মানি মার্কেটে। এখন টাকা আরও টাইট হয়ে যাবে। যার ফলে ব্যাংকগুলোর বেসরকারি ঋণ প্রবাহ আরও কমবে।”

তিনি বলেন, কল মানি মার্কেট ছিল ব্যাংকগুলোর জন্য সহজে প্রয়োজন মেটানোর, অর্থাৎ তারল্য ব্যবস্থাপনার একটা মাধ্যম। এখানে রেট বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, ব্যাংকগুলো আরও বেশি সুদে ডিপোজিট সংগ্রহের দিকে ঝুঁকবে।

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০