ইসমাইল আলী: চলতি বছর জুন পর্যন্ত দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ১৬২টি। যদিও মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় বেশকিছু কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ১১টি কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও বসিয়ে রেখে বেতন-ভাতা এবং রক্ষণাবেক্ষণ খাতে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। এতে কেন্দ্রগুলোর পেছনে গত অর্থবছর পিডিবির গচ্চা গেছে প্রায় ২৬৭ কোটি টাকা।
পিডিবির তথ্যমতে, উৎপাদন বন্ধ থাকা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে চারটির রক্ষণাবেক্ষণে অন্য কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। এতে চার কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ছিল ঋণাত্মক। এমনই একটি কেন্দ্র টঙ্গী পাওয়ার স্টেশন। গ্যাসচালিত ১০৯ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল। তবে এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাইরে থেকে সাত লাখ ৯৩ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
গত অর্থবছর টঙ্গী পাওয়ার স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ছিল এক কেটি ৯৮ লাখ টাকা। আর বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ছিল ২৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কেন্দ্রটির পেছনে পিডিবির ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি ঋণাত্মক উৎপাদন ব্যয় পড়ে ৩৪৪ টাকা ৫৫ পয়সা।
একই অবস্থা ২১০ মেগাওয়াটের সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের। গ্যাসচালিত এ কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণে গত অর্থবছর বাইরে থেকে ৪৬ লাখ ৮৮ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এজন্য জ্বালানি মূল্য পরিশোধ করতে হয় আট লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এছাড়া গত অর্থবছর কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ছিল ছয় কোটি তিন লাখ টাকা। আর বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ছিল ৮৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কেন্দ্রটির পেছনে পিডিবির ব্যয় হয় প্রায় ৯৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি ঋণাত্মক উৎপাদন ব্যয় পড়ে ২০০ টাকা ছয় পয়সা।
ফার্নেস অয়েলচালিত খুলনা পাওয়ার স্টেশনের উৎপাদনও গত অর্থবছর বন্ধ ছিল। তবে এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাইরে থেকে পাঁচ লাখ ১৭ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। গত অর্থবছর ওই কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ছিল ৭৮ লাখ টাকা। আর বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ছিল ৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এতে কেন্দ্রটির পেছনে পিডিবির গচ্চা গেছে প্রায় ৭১ কোটি ৯ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি ঋণাত্মক উৎপাদন ব্যয় পড়ে এক হাজার ৩৭৫ টাকা ৬৭ পয়সা।
বরিশাল ডিজেল পাওয়ার স্টেশনেরও একই অবস্থা ছিল গত অর্থবছর। উৎপাদন বন্ধ থাকলেও এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাইরে থেকে দুই হাজার ৭৫০ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এতে কেন্দ্রটির জন্য পিডিবির ব্যয় হয় প্রায় তিন কোটি ২৩ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি ঋণাত্মক উৎপাদন ব্যয় পড়ে ১১ হাজার ৭৪৫ টাকা ৪৯ পয়সা।
এদিকে বাকি সাত কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও বাইরে থেকে কোনো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়নি। তবে এসব কেন্দ্রের পেছনে ব্যয় ঠিকই অব্যাহত ছিল গত অর্থবছর। এর মধ্যে শাহজিবাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে পিডিবির গচ্চা গেছে এক কোটি ৪৮ লাখ টাকা, বিবিয়ানা দক্ষিণ কেন্দ্রে ৭৮ লাখ টাকা, ভোলা ডিজেল জেনারেটর পাওয়ার স্টেশনে এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা, সৈয়দপুর ডিজেল জেনারেটরে তিন লাখ টাকা, সন্দ্বীপ ডিজেল জেনারেটরে ৫০ লাখ টাকা, শিকলবাহা ডুয়েল ফুয়েল পাওয়ার স্টেশনে ৬৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং ডিজিডি ঢাকা কেন্দ্রে এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ১১টি কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে ২৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।