ইসমাইল আলী: চলতি বছর জুন পর্যন্ত দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ১৪৭টি। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ১১টি কেন্দ্রে কোনো উৎপাদনই হয়নি। তবে কেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন বন্ধ থাকলেও বসিয়ে রেখে বেতন-ভাতা এবং রক্ষণাবেক্ষণ খাতে অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে কেন্দ্রগুলোর পেছনে গত অর্থবছর পিডিবির গচ্চা গেছে প্রায় ২৭১ কোটি টাকা।
পিডিবির তথ্যমতে, উৎপাদন বন্ধ থাকা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ছয়টির রক্ষণাবেক্ষণে অন্য কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়েছে ঋণাত্মক। এমনই একটি কেন্দ্র ভেড়ামারা পাওয়ার স্টেশন। ডিজেলচালিত ৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাইরে থেকে এক লাখ ৫৩ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণ ও বেতন-ভাতা খাতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ছিল প্রায় ৩১ লাখ টাকা। আর বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ছিল ২১ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কেন্দ্রটির পেছনে পিডিবির ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ২১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি ঋণাত্মক উৎপাদন ব্যয় পড়ে এক হাজার ৪০৫ টাকা ১৪ পয়সা।
একই অবস্থা টঙ্গী পাওয়ার স্টেশন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির। গ্যাসচালিত ১০৯ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটিতে কয়েক বছর ধরেই বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে এ কেন্দ্রটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গত অর্থবছর বাইরে থেকে দুই লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এতে কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় পড়ে ৩৪ লাখ টাকা। আর বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ছিল ২২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কেন্দ্রটির পেছনে পিডিবিকে ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ২৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি ঋণাত্মক উৎপাদন ব্যয় পড়ে এক হাজার ১৫৮ টাকা ৩৮ পয়সা।
এদিকে ১১৫ মেগাওয়াটের সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন রক্ষণাবেক্ষণে গত অর্থবছর বাইরে থেকে ১২ লাখ ৮৭ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এতে গত অর্থবছর কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় দাঁড়ায় ১০ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ছিল ৭২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কেন্দ্রটির পেছনে পিডিবি গচ্চা যায় প্রায় ৮২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি ঋণাত্মক উৎপাদন ব্যয় পড়ে ৬৪৪ টাকা ১৩ পয়সা।
একই অবস্থা ৪০ মেগাওয়াটের বরিশাল গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির। ডিজেলচালিত এ কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ থাকলেও গত অর্থবছর এর রক্ষণাবেক্ষণে বাইরে থেকে প্রায় দুই লাখ ৩১ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এতে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় পড়ে এক কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ছিল আট কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এতে কেন্দ্রটির জন্য পিডিবির ব্যয় হয় প্রায় ১০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি ঋণাত্মক উৎপাদন ব্যয় পড়ে ৪৫৬ টাকা ১৭ পয়সা।
ফার্নেস অয়েলচালিত ৯৮ মেগাওয়াটের হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদনও গত অর্থবছর বন্ধ ছিল। তবে এ কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণে বাইরে থেকে আট লাখ ৫৭ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এ জন্য বিল পরিশোধ করতে হয় ছয় কোটি চার লাখ টাকা। আর গত অর্থবছর ওই কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ছিল ১১ কোটি ১৮ লাখ টাকা ও বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এতে কেন্দ্রটির পেছনে পিডিবির গচ্চা গেছে প্রায় ৩৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি ঋণাত্মক উৎপাদন ব্যয় পড়ে ৪০৭ টাকা দুই পয়সা।
একইভাবে ডিজেলচালিত এসবিইউ হরিপুর কেন্দ্রটি বন্ধ পড়ে আছে কয়েক বছর ধরে। নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত এ কেন্দ্রটি রক্ষণাবেক্ষণে গত অর্থবছর চার লাখ ২২ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কেন্দ্রটির জন্য এ সময় বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ছিল আট কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এতে কেন্দ্রটির ইউনিটপ্রতি ঋণাত্মক উৎপাদন ব্যয় পড়ে ২১২ টাকা ৯৮ পয়সা।
এগুলোর বাইরেও পিডিবির পাঁচটি কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে ওই কেন্দ্রগুলোয় বাইরে থেকে কোনো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়নি। তবে বেতন-ভাতাসহ নানা খাতে এসব কেন্দ্রের পেছনে ব্যয় ঠিকই অব্যাহত ছিল গত অর্থবছর। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলচালিত ১৭০ মেগাওয়াটের খুলনা পাওয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে পিডিবির গচ্চা গেছে ৩৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এছাড়া ডিজেলচালিত ভোলা ডিজেল জেনারেটর পাওয়ার স্টেশনের জন্য তিন কোটি দুই লাখ টাকা, দুই মেগাওয়াট ক্ষমতার কুতুবদিয়া ডিজেল জেনারেটরে ১৫ কোটি ২১ লাখ টাকা, তিন মেগাওয়াট ক্ষমতার সন্দ্বীপ ডিজেল জেনারেটরে ২৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং ডিজিডি ঢাকা কেন্দ্রের জন্য ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে ১১টি কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে ২৭০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।