১১ ব্যাংকের স্প্রেড পাঁচ শতাংশের ওপরে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা সত্ত্বেও বারবার তা অমান্য করে চলেছে ১০ থেকে ১২টি ব্যাংক। বর্তমানে ১১টি ব্যাংকের স্প্রেড (ঋণ ও আমানতের সুদের ব্যবধান) পাঁচ শতাংশের উপরে রয়েছে। যদিও নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ৪০টি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত স্প্রেড সীমার বাইরে রয়েছে। স্প্রেড বেশি রয়েছে বিদেশি স্টান্ডার্ড চার্টার্ড এবং বেসরকারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদেশি খাতের সাতটি ব্যাংকের স্প্রেড পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপর অবস্থান করছে। গত এপ্রিল শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে গড়ে আট দশমিক ৮৯ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে মাত্র দুই শতাংশ সুদ। স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৮৯ শতাংশ। বেশিরভাগ বিদেশি ব্যাংক বরাবরই স্প্রেড নির্দেশনা অমান্য করে।
অন্যদিকে, সার্বিকভাবে বেসরকারি ব্যাংকের স্প্রেড চার দশমিক ৩২ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে ছয় দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ সুদ দিয়েছে। অন্যদিকে ঋণের বিপরীতে আদায় করেছে ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, স্প্রেড পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের উপরের ব্যাংকগুলো হলোÑ বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, সিটি ব্যাংক এনএ, কর্মাশিয়াল ব্যাংক অব সিলন, উরি ব্যাংক, দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন এবং ব্যাংক আলফালাহ। বেসরকারি ব্যাংকগুলো হলোÑ ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক , এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং মধুমতি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড পাঁচ শতাংশের নিচে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার নির্দেশনা দিয়ে আসছে। কিন্তু তা মানছে না বেশ কয়েকটি ব্যাংক। ১০টি ব্যাংক আমানতকারীদের ঠকিয়ে ঋণের সুদ বেশি নিয়েছে। এসব ব্যাংক আমানতকারীদের সামান্য সুদ দিলেও ঋণের সুদ নিচ্ছে চড়া দামে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড আমানতের বিপরীতে গড়ে এক দশমিক ৬২ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আর ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকটি ১০ দশমিক ছয় শতাংশ সুদ নিয়েছে। বিদেশি খাতের এ ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ আট দশমিক ৪৪ শতাংশ। এছাড়া বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক আমানতের ক্ষেত্রে দুই দশমিক ৪৫ শতাংশ সুদ দিয়েছে। অন্যদিকে ঋণের ক্ষেত্রে নিয়েছে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ সুদ।
চলতি বছরের এপ্রিল শেষে দেশের ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে গ্রাহকদের পাঁচ দশমিক ৪৩ শতাংশ সুদ দিয়েছে। অন্যদিকে ঋণের ক্ষেত্রে নিয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ সুদ। সার্বিকভাবে স্প্রেড দাঁড়িয়েছে চার দশমিক ৪৬ শতাংশ।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান চার শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। সে অনুযায়ী, বর্তমানে ৪০টি ব্যাংকের স্প্রেড চার শতাংশের ওপরে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত আমানতের সুদহারের চেয়ে ঋণের সুদহার অনেক বাড়ানোর কারণেই স্প্রেড বেড়ে যাচ্ছে। ঋণ চাহিদা বৃদ্ধি, তারল্য সংকট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) পরিপালনের কঠোরতা আরোপ করায় ঋণের সুদহার বাড়ছে। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ঋণের সুদহার বাড়ায় ব্যাংকগুলো। এরপর ধারাবাহিকভাবে ঋণের সুদহার বাড়াতে থাকে ব্যাংকগুলো। সব মিলিয়ে দুই থেকে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত সুদহার বাড়ানো হয়েছে। গত বছর আট থেকে সাড়ে ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ পাওয়া গেলেও চলতি বছরে ঋণ পেতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হচ্ছে।
তবে স্প্রেড ও ঋণের সুদহার কমাতে সম্প্রতি পৃথক দুটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের ঋণের সুদহার ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করছে। ঋণের সুদহার অযৌক্তিক মাত্রায় বৃদ্ধি করা হচ্ছে যা উদ্বেগজনক। ঋণশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নতুনভাবে খেলাপি ঋণ সৃষ্টির ঝুঁকি এড়াতে ঋণের সুদহার না বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, কোনো ঋণের মঞ্জুরিপত্রে সুদহার অপরিবর্তনশীল উল্লেখ থাকলে ওই ঋণের সুদহারে সংশ্লিষ্ট ঋণের মেয়াদকালে ঊর্ধ্বমুখী কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। শুধুমাত্র ঋণের মঞ্জুরিপত্রে সুদহার পরিবর্তনশীল উল্লেখ থাকলেই ওই ঋণের সুদহারে বিশেষ কিছু নিয়মে সংশোধন করা যবে। এক্ষেত্রে ঋণের সুদহার বছরে একবারের বেশি বাড়ানো যাবে না; ঋণের সুদহার বাড়ানো বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে কমপক্ষে তিন মাস আগে নোটিস প্রদান করতে হবে। গ্রাহককে অবহিত না করে কোনো ঋণের সুদহার বৃদ্ধি করা যাবে না; মেয়াদি ঋণের বেলায় প্রতিবার অনধিক শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ এবং চলতি মূলধন ও অন্যান্য ঋণের বেলায় প্রতিবার অনধিক এক শতাংশ মাত্রায় পরিমিত রাখতে হবে। নতুন ঋণ মঞ্জুরির সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিআরপিডি কর্তৃক ইতিপূর্বে ইস্যুকৃত পরিপত্রগুলোর নির্দেশনা বলবৎ থাকবে। পাশাপাশি ঋণ এবং আমানতের গড়ভারিত সুদ হারের ব্যবধান চার শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০