নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ৩০ কোটি ১৪ লাখ ২২ হাজার ১৮৬ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)। বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের বেঞ্চে গতকাল ডিজিডিএর উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল, অনিবন্ধিত ও ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণ ও বিপণনের দায়ে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সাত কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ২০৩ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, টাকার হিসাবে ৪২টি ওষুধ কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস হয়েছে একমি ল্যাবরেটরিজের। এই কোম্পানির পাঁচ কোটি ৬৪ লাখ ৮৯ হাজার ২১৫ টাকার ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে।
এর পরই আছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এই ওষুধ কোম্পানিটির ৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তিন কোটি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ১৫৮ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের দুই কোটি ৯৬ লাখ ৮৪ হাজার ৮৭০ টাকার এবং অপসোনিন ফার্মা লিমিটেডের দুই কোটি ৭৫ লাখ টাকার ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এক হাজার ৪৩৭টি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে ৫৭ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে।
এবিএম আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, তিন মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধবিরোধী অভিযানের সর্বশেষ প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালত বলেছেন, শুধু ফার্মেসি নয়, যদি সম্ভব হয় তাহলে যেখানে ওষুধ উৎপাদিত হয়, লেবেলিং হয়, সেখানেও যেন অভিযান পরিচালনার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। কারণ অনেক সময় দেখা যায় রিলেবেলিং করে ওষুধ বাজারে ছাড়া হয়। ফলে রিলেবেলিং যাতে না হয়, সেটিও যেন নিশ্চিত করা হয়।
গত বছর ১০ মে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়।
এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে এর নির্বাহী পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন গত বছর ২৪ জুন হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন। সে রিটের প্রথামিক শুনানির পর ২৮ জুন রুলসহ আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
সারা দেশে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার, জব্দ ও ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সরবরাহকারী, সংরক্ষণ ও বিপণনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। রুলে ফার্মেসি ও ওষুধাগারে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি ও সংরক্ষণ বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
স্বাস্থ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, বাণিজ্য সচিব, শিল্প সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও উপপরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও মহাসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর ১৯ নভেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সে প্রতিবেদনে তিন মাসেই (আগস্ট-অক্টোবর, ২০১৯) ৩৪ কোটি সাত লাখ ৬৯ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করার কথা বলেছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
ওই সময় মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদন দেখে আদালত মৌখিক নির্দেশনায় বলেছিলেন, ভেজাল-মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ, বাজারজাত ও বিপণনের কারণে যাদের জেল-জরিমানা হয়েছে, তারা যদি আবার একই ধরনের অপরাধ করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়। এছাড়া ওষুধ শিল্প সমিতিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, ওষুধের প্যাকেট ও পাতায় উৎপাদন, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, মূল্য ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বাংলা-ইংরেজিতে স্পষ্ট করে ছাপিয়ে বাজারজাত করতে।