১১ মাসে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র ৫৭.৫%

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) বাস্তবায়নে চলছে খরা। এডিপি বাস্তবায়নে গতি সঞ্চারে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে অর্থবছরের ১১ মাসে আরএডিপি বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৭ দশমিক ৫৪ শতাংশে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় চার শতাংশীয় পয়েন্ট শতাংশ কম। অথচ অর্থবছর শেষ হতে বাকি আর মাত্র এক মাস। এই সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে বাকি ৪৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ এডিপি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসের এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইএমইডি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরাদ্দের হিসাবে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছাড়া বেশিরভাগই তাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের আরএডিপিতে এক হাজার ৬৪৭ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। প্রথম ১১ মাসে ৫৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকা এসব প্রকল্পের বিপরীতে খরচ হয়েছে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৭৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৫৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

১১ মাসের এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, করোনার সময় ছাড়া চলতি অর্থবছরের মতো এত কম এডিপি বাস্তবায়ন আর কখনও হয়নি। ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছর। ওই অর্থবছর একই সময়ে বাস্তবায়ন হার ছিল ৫৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৫৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের চেয়েও প্রায় এক শতাংশ বেশি। অর্থবছরের ১১ মাসে কখনও ৬০ শতাংশের নিচে নামেনি এডিপি বাস্তবায়নের হার। এমনকি গত অর্থবছরেও বাস্তবায়ন হার ছিল ৬১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

এদিকে সামগ্রিকভাবে এডিপি বাস্তবায়ন হারের সঙ্গে মাসের হিসাবে চলতি অর্থবছরের মে মাসে গতবারের তুলনায় কম বাস্তবায়ন হয়েছে। তথ্যানুযায়ী, শুধু মে মাসে এডিপি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ২১ হাজার ৫৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ সময় বাস্তবায়নের হার ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে খরচ হয় ২৬ হাজার ৯৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ মাসের হিসাবে বাস্তবায়ন তিন শতাংশেরও কম হয়েছে।

আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাস্তবায়ন হারে সবচেয়ে পিছিয়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পরিসংখ্যান ও সরকারি কর্মকমিশন। এ ছাড়া কয়েকটি বাদে অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৪৩ দশমিক ০৩ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ৪৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ ৪৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।

এ ছাড়া ১১ মাসে ৪০ শতাংশও এডিপি বাস্তবায়ন করতে পারেনি সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন করেছে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাস্তবায়ন করেছে ২৭ দশমিক ০৭ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ করেছে ২৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ৩০ দশমিক ০৩, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন ৩২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় ৩৩ দশমিক ৭২ এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৩৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।

চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি ১১ মাসে বাস্তবায়ন করেছে মোট বরাদ্দের ৯৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ ৯২ দশমিক ১৪, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ৮৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৭৯ দশমিক ০৬, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়র বিভাগ ৭৬ দশমিক ৭৫ এবং সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ ৭৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।

শতাংশের হিসাবে বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকলেও টাকা খরচে এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভাগটির ২৬৩ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৪২ হাজার ৯৫৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ১০ মাসে ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৭৬২ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা ৫৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থান বিদ্যুৎ বিভাগের, খরচ করেছে ২০ হাজার ৭৬২ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০