Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:11 am

১১ লাখ ফিলিস্তিনিকে গাজা ছাড়তে বললো ইসরায়েল

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজা ভূখণ্ডের উত্তরাংশ ওয়াদির ১১ লাখ বেসামরিক ফিলিস্তিনিকে ভূখণ্ডে দক্ষিণাংশে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। শুক্রবার ভোর রাতের দিকে এই আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর: রয়টার্স

৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট গাজা উপত্যকায় বসবাস করেন ২৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি। তাদের প্রায় অর্ধেকই বসবাস করেন ওয়াদিতে। এত অল্প সময়ের আল্টিমেটামের মধ্যে দুর্ঘটনা ও মানবিক বিপর্যয় এড়িয়ে এই পরিমাণ লোকজনের স্থানান্তর অসম্ভব বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

শুক্রবার এক বিবৃতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জাতিসংঘ মনে করছে, বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় এড়িয়ে যে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত সংখ্যক মানুষকে এলাকা ত্যাগ রীতিমতো অসম্ভব।’

‘যুদ্ধের কারণে এমনিতেই গাজা ভূখণ্ডে লোকজন নানামুখী বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আইডিএফের এই আল্টিমেটামেটামের জেরে বিপর্যয়ের মাত্রা আরও বাড়বে। জাতিসংঘ আইডিএফকে তাদের নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করার জরুরি আহ্বান জানাচ্ছে।’

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আইডিএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযানের চুড়ান্ত প্রস্তুতির কাজ শেষ হয়েছে। আগামীকাল বা তার পরের দিন থেকে শুরু হবে এই অভিযান। এ কারণেই সেখানকার বেসামরিক লোকজনকে সরে যেতে বলা হয়েছে।

ওয়াদি সীমান্ত এলাকায় বেশ কিছু ইসরায়েলি ট্যাংকের উপস্থিতি দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন রয়টার্সের প্রতিনিধি।

২ বছর ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শেষে ৭ অক্টোবর শনিবার ভোর রাত থেকে দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক রকেট ছোড়া শুরু করে গাজা ভূখণ্ডে নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এবং হামাসের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সূর্যের আলো পুরোপুরি ফোটার আগেই ৩ হাজারেরও বেশি রকেট ছোড়া হয়েছিল ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে।

কাছাকাছি সময়ে মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডারে চেপে হামাসের বেশ কয়েকজন যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমা-ের কার্যালয়ে গিয়ে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের বন্দি ও জিম্মি করার পাশাপাশি ওই কমান্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মূল কমান্ড ও অন্যান্য শাখার কার্যালয়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মোটরসাইকেল ও জীপে করে সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করেন হামাসের আরও কয়েক শ’যোদ্ধা।

গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি ও পূর্বপ্রস্তুতি না থাকার কারণে হামাসের হামলার পর প্রথম দিকে খানিকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় ছিল ইসরায়েল। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে ফিরে আসে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।

১৯৫৩ সালের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার যুদ্ধ হচ্ছে আল আকসা অঞ্চলে। ইসরায়েলের সরকার ইতোমধ্যে হামাসকে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

গাজায় লাখ লাখ মানুষের ঘুমানোর জায়গা নেই: রেডক্রস

ইসরায়েলি ব্যাপক হামলায় গাজা ইতোমধ্যেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দেখা দিয়েছে মানবিক সংকট। এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটির লাখ লাখ মানুষের ঘুমানোর কোনো জায়গা নেই বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি)।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, অবরুদ্ধ গাজা ভূখ-ে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে আইসিআরসি বলেছে, “আজ রাতে গাজায় লাখ লাখ মানুষের ঘুমানোর জায়গা নেই।”

সংস্থাটি বলেছে, “গাজার ২০ লাখেরও বেশি মানুষ পানি ও বিদ্যুতের পাশাপাশি মৌলিক প্রয়োজনীয়তা সংকট রয়েছে। এমনকি হামলায় আহতদের কাছে অ্যাম্বুলেন্সও পৌঁছাতে পারছে না। বেসামরিক নাগরিকদের সংঘাত ও শত্রুতার প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হবে।”