তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞা ও আত্মা

১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদে গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। তাৎক্ষণিকভাবে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা ও আত্মা। এতে বলা হয়, তামাক কর ও মূল্য বৃদ্ধি-সংক্রান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে সরকার তামাক খাত থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জন করতে পারত এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ছয় লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তামাককে করোনা সংক্রমণ সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য জোর তাগিদ দিয়ে আসছে। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে এসবের কোনো প্রতিফলন নেই। সিগারেটের চারটি মূল্যস্তর বহাল রাখায় কম দামি সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ অব্যাহত থাকবে এবং তরুণরা ধূমপান শুরু করতে উৎসাহিত হবে। ফলে সিগারেটের ব্যবহার না কমে বরং বৃদ্ধি পাবে। বাজেট প্রস্তাবে নি¤œস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম মাত্র দুই টাকা বাড়িয়ে ৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, অর্থাৎ প্রতি শলাকায় দাম বৃদ্ধি পাবে মাত্র ২০ পয়সা বা পাঁচ দশমিক চার শতাংশ। অথচ একই সময়ে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ছয় শতাংশ।

সিগারেট বাজারের প্রায় ৭২ শতাংশই নি¤œস্তরের সিগারেটের দখলে। এ স্তরে সম্পূরক শুল্ক ধার্য করা হয়েছে ৫৭ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৫৫ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেট কার্যকর হলে এ স্তরের সিগারেটের প্রকৃত মূল্য হ্রাস পাবে এবং ব্যবহার বাড়বে। বিড়ির শলাকাপ্রতি মাত্র ১৬ পয়সা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বিড়ির ব্যবহার কমবে না বরং দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাবে।

অন্যদিকে ১০ গ্রাম জর্দার দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সন্তোষজনক। তবে ১০ গ্রাম গুলের দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র পাঁচ টাকা। এর ফলে নারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এসব তামাকপণ্যের ব্যবহার খুব একটা কমবে না। সার্বিকভাবে অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ, অকাল মৃত্যু রোধ এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাসে প্রস্তাবিত তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ কোনো ভূমিকা রাখবে না, যা হতাশাজনক।

জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিড়ির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে কোনো কার্যকর উদ্যোগ প্রস্তাবিত বাজেটে নেই। করোনা মহামারি চলাকালে দু মাস ধরে বিড়ি শ্রমিকদের ব্যবহার করে কারখানার মালিকপক্ষ যে অযৌক্তিক আন্দোলন চালিয়েছে, তার ফলস্বরূপ বাজেট ঘোষণায় তাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪০ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক ধার্য করা হয়েছে ৫৫ শতাংশ। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে এই মূল্য বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে না। বাংলাদেশে বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে। বাস্তবতা হলো মোট তামাক রাজস্বের এক শতাংশেরও কম আসে ধোঁয়াবিহীন তামাক থেকে। সুতরাং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য থেকে সরকারের বাড়তি রাজস্ব আয়ের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০