সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ১২৬ প্রতিষ্ঠানের কাছে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের বকেয়া রয়েছে ১৫৩ কোটি ৫৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা। মোট ৪১ খাতে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব পাওনা রয়েছে বিউবোর। সরকারি ৩২ খাতে ৯০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনার পরিমাণ ৪৮ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। স্বায়ত্তশাসিত ৯টি খাতে ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা অনাদায়ী রয়েছে ১০৫ কোটি ২৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
বিউবোর তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত হিসাবে দেখা যায় সরকারি ৩২টি খাতে ৯০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে অনাদায়ী পাওনা রয়েছে ৪৮ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনা ৩৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা এবং সুদের পরিমাণ ১৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে স্বায়ত্তশাসিত ৯টি খাতে ৩৬টি প্রতিষ্ঠানে কাছে অনাদায়ী পাওনা রয়েছে ১০৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এ ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মূল পাওনা রয়েছে ৪৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা আর সুদের পরিমাণ ৬০ কোটি ৫৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।
পিডিবির সহকারী পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জমান বলেন, গত জুন পর্যন্ত পিডিবি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে সুদসহ ১৫৩ কোটি ৫৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। এখানে মূল পাওনা ৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সুদের পরিমাণ ৭৪ কোটি ৭৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত এসব প্রতিষ্ঠান সময়মতো বিল পরিশোধ না করায় তাদের সুদের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। ফলে তাদের থেকে পাওনার টাকা আদায় হলেও সুদ রয়ে যায়। অন্যদিকে ব্যক্তি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের তেমন একটা পাওনা থাকে না। ব্যক্তির পাওনা থাকলে নির্দিষ্ট সময় শেষে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ কর্তন করা হয় ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বিউবো সূত্রে জানা যায়, সরকার পরিচালিত বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে সর্বাধিক বিদ্যুৎ বিল পাওনা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট পাওনার পরিমাণ ১০ কোটি ১১ লাখ টাকা। এরপরের স্থানে আছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। এ বিভাগে ৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা পিডিবি পাওনা রয়েছে। তৃতীয় অস্থানে আছে যোগাযোগ বিভাগ। এ বিভাগের পাঁচ কোটি ৭২ লাখ টাকা অনাদায়ী বিলের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাওনা রয়েছে পাঁচ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, আনসার, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, কারাগার, সিসিএম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও কৃষিতে সর্বাধিক বিদ্যুৎ বিল পাওনা রয়েছে। জানা গেছে, সরকারি এসব প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছরদরে বিদ্যুৎ বিল পাওনা রেখেছে। সরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বাজেট হয়। বাজেটের অর্থ বরাদ্দ পেতে সময় লাগে। এছাড়া সুদের টাকা পরিশোধ না করার জন্য লিঁয়াজো করা হয়।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একক সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে প্রধান প্রকোশলী (বিদ্যুৎ) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পিডিবির এ হিসাব পুরোপরি সঠিক না। বর্তমানে আমাদের তেমন একটা পাওনা নেই তবে পুরোনো পাওনা থাকতে পারে। পিডিবি যথাসময়ে আমাদের বিলের রসিদ পাঠাতে ব্যর্থ হয়। ১৫ থেকে ২০ তারিখের পরে রসিদ পাঠালে সময়মতো পরিশোধ করতে সমস্যা হয়। তবে সুদ না দেওয়ার ক্ষেত্রে পিডিবির সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়ে থাকে।
অন্যদিকে স্বায়ত্তশাসিত ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের ১০৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা মধ্যে সর্বাধিক বিদ্যুৎ বিল পাওনা রেখেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। চসিকের পাওনার পরিমাণ ৭৬ কোটি ৩৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা। এরপরের স্থানে আছে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন। তাদের পাওনার পরিমাণ ১১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত স্বাস্থ্য খাতে সাত কোটি, চট্টগ্রাম ওয়াসার তিন কোটি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল করপোরেশনের তিন কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বাকিগুলো পরিশোধ করেনি ৩১টি প্রতিষ্ঠান।