১২ কোম্পানির ক্যাপাসিটি চার্জ ৪৭,২৬২ কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীলতা এক দশকে অনেকটাই বেড়েছে। এ সময় রেন্টাল-কুইক রেন্টাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বিদ্যুৎ খাত। উল্টো বড় আকারের ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারের (আইপিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে অনেকগুলো। এতে বিদ্যুৎ খাত গুটিকয়েক বড় করপোরেটের দখলে চলে গেছে। আর এক দশকে শীর্ষ ১২টি গ্রুপ/কোম্পানির পকেটে গেছে ক্যাপাসিটি চার্জের প্রায় ৬৮ শতাংশ।

বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনাবিষয়ক কর্মজোটের (বিডব্লিউজিইডি) প্রকাশিত ‘দ্য পাওয়ার সেক্টর অব বাংলাদেশ ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবির) ১০ বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণপূর্বক প্রণয়ন করা হয়েছে।

এতে দেখা যায়, ২০১১-১২ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে ৬৯ হাজার ৯৮৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ১২টি কোম্পানিকে দিতে হয়েছে ৪৭ হাজার ২৬২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে শীর্ষে রয়েছে সামিট গ্রুপ। বর্তমানে গ্রুপটির অধীনে সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া বিবিয়ানা-২-এর ৮০ শতাংশ ও খুলনা পাওয়ার কোম্পানির ৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সামিটের কাছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে সামিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৪৫১ মেগাওয়াট। গত এক দশকে গ্রুপটি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে প্রায় ৯ হাজার ২৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল। কোম্পানিটি এক দশক ধরেই বিদ্যুৎ খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করে আসছে। তবে গত কয়েক বছরে তাদের কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে যাওয়ায় বর্তমানে এগ্রিকোর উৎপাদন সক্ষমতা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০০ মেগাওয়াটে। গত এক দশকে কোম্পানিটি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে ছয় হাজার ৯৭০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

মালয়েশিয়াভিত্তিক চীনা কোম্পানি এরদা পাওয়ার হোল্ডিংস ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বর্তমানে ৮১০ মেগাওয়াট। বর্তমানে এ কোম্পানির দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে বাংলাদেশে। এর একটি মেঘনাঘাটে ৪৫০ মেগাওয়াটের ও অপরটি হরিপুরে ৩৬০ মেগাওয়াটের। এ কোম্পানি গত এক দশকে ছয় হাজার ৭২০ কোটি ৯২ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে।

দেশীয় ইউনাইটেড গ্রুপ রয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে চতুর্থ অবস্থানে। বর্তমানে এ গ্রুপটির ছয়টি নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া গ্রুপটির কাছে কেপিসিএলের ৩৫ শতাংশ, পায়রায় একটি কেন্দ্রের ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ ও আশুগঞ্জের একটি কেন্দ্রের ৭১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সব মিলিয়ে ইউনাইটেড গ্রুপের বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার পাঁচ মেগাওয়াট। এক দশকে গ্রুপটি চার হাজার ৮৮১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে।

এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খুলনা পাওয়ার কোম্পানির (কেপিসিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে তিনটি। এছাড়া পায়রায় ইউনাইটেড গ্রুপের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে কেপিসিএলের কাছে। সামিট ও ইউনাইটেড গ্রুপের সমান ৩৫ শতাংশ করে ৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে কোম্পানিটির। বাকি ৩০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। কোম্পানি এক দশকে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে তিন হাজার ৬৩৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে এদের অবস্থা পঞ্চম।

বাংলাক্যাট রয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে ষষ্ঠ স্থানে। এ গ্রুপের পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে বর্তমানে, যেগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে অ্যাক্রন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের (ইউনিট-১, ২ ও ৩) উৎপাদন সক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট এবং বাংলা ট্র্যাক-১ ও ২ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট। এ গ্রুপটি এক দশকে তিন হাজার ৪৭৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে।

ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে সপ্তম অবস্থানে থাকা ওরিয়ন গ্রুপের বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৫০৭ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১০০ মেগাওয়াটের একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্রও রয়েছে। এ গ্রুপটি এক দশকে তিন হাজার ৪৫২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। আর অষ্টম অবস্থানে হোসাফ গ্রুপের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৮৩ মেগাওয়াট। এনার্জি প্রিমা ও হোসাফ পাওয়ার নামে এ গ্রুপের কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এক দশকে এ গ্রুপটি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে দুই হাজার ৯৫ কোটি টাকা।

ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে এর পর রয়েছে মোহাম্মদী গ্রুপ। নবম স্থানে থাকা গ্রুপটি বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। এক দশকে গ্রুপটি এক হাজার ৯১০ কোটি পাঁচ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। এছাড়া দশম স্থানে থাকা ম্যাক্স গ্রুপ এক দশকে এক হাজার ৭০৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, একাদশ স্থানে থাকা সিকদার গ্রুপ এক হাজার ৬১২ কোটি ১২ লাখ টাকা ও দ্বাদশ স্থানে থাকা এপিআর এনার্জি এক হাজার ৫২৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। এদের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা যথাক্রমে ১৮৭ মেগাওয়াট, ১৯৫ মেগাওয়াট ও ৩০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে এপিআর এনার্জি যুক্তরাজ্যের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০