নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আবার সচল হয়েছে উচ্চগতির থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট সেবা। এই সময়ে সারাদেশের মানুষ তাদের মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিঘিœত হয়েছে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক বিভিন্ন সেবা।
দেশের টেলিকম কোম্পানিগুলোর একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশে শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে তারা থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট বন্ধ রেখেছিলেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশেই বিকাল ৫টায় ঢাকায় আবার সেই সেবা চালু করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সিলেট, রাজশাহী ও বরিশালেও তা সচল হয়।
রাতেই সব অপারেটরের থ্রিজি ও ফোরজি সেবা স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সাম্প্রদায়িক উসকানি ছড়িয়ে দুদিন আগে
কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় দুর্গাপূজার মণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের পর বুধবার থেকেই ছয় জেলায় উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
গতকাল শুক্রবার বিজয়া দশমীর দিন সকাল থেকে সারাদেশেই একই পদক্ষেপ নেয়া হয় বলে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান। তাদের একজন বলেন, ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত’ এ সেবা বন্ধ রাখতে বলেছিল বিটিআরসি। তবে বিটিআরসি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সকালে তিনি বলেন, ‘কারিগরি ত্রুটির কারণেও এ সমস্যা হতে পারে, খুব দ্রুতই সমাধান হবে বলে আশা করি।’
দেশে সাড়ে ১৭ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহকের অর্ধেকের বেশি গ্রামীণফোনের সেবা নেন। গ্রামীণফোন সকালে গ্রাহকদের এসএমএস করে বলে, ‘বন্ধ ফোরজি ও থ্রিজি সেবা ফিরিয়ে আনতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছি। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত।’
ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড তাদের গ্রাহকদের এসএমএস করে সতর্ক করে। সেখানে বলা হয়, ফোরজি ও থ্রিজি সেবা বন্ধ থাকায় কার্ডের মাধ্যমে তাদের সেবাও বিঘিœত হতে পারে।
বিকালে মোবাইল ফোনে থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট ফেরার পর সেসব সমস্যাও কাটতে শুরু করে।
কুমিল্লায় বুধবার সকালে একটি মন্দিরে ‘কোরআন অবমাননার’ কথিত অভিযোগের ছবি-ভিডিও ফেসবুকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মন্দিরে হামলা হয়, যা থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।
কুমিল্লায় নানুয়া দিঘির পাড়ে একটি পূজামণ্ডপে ঘটনার সূত্রপাত হলেও বিকাল পর্যন্ত আরও কয়েকটি মন্দির ও মণ্ডপে হামলা হয়। চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ আরও কয়েকটি জেলায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নজরে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘অপপ্রচার’ রোধে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। বুধবার তিনি বলেছিলেন, ঘটনার পর থেকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে একশ’র বেশি ফেসবুক লিংক বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।’
অপ্রপ্রচারকারীরা যেন সুযোগ না পায়, সেজন্য কুমিল্লার ঘটনার পরপরই ওই এলাকার ইন্টারনেট গতিতে ‘নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে’ বলে সেদিন তিনি জানিয়েছিলেন।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সর্বশেষ হিসাবে দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাড়ে ১২ কোটি ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ১১ কোটি ৫৪ লাখ গ্রাহক মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।