১২ বছরেও অবস্থান শক্ত হয়নি বিডিবিএলের

জয়নাল আবেদিন: ২০০৯ সালে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (বিএসআরএস) একীভূত করে গঠন করা হয় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। ঋণখেলাপি নামক রোগ সারাতে এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে জানা যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত উন্নতি করতে পারেনি ব্যাংকটি। ব্যাংকটির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে ব্যাংকটির ঋণ ছিল এক হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। ১০ বছর পর (২০২১) ঋণের পরিমাণ এসে দুই হাজার ৩৮৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। খেলাপি ঋণের হার এখনও ৩৫ শতাংশের ওপর।

নানা সমস্যায় জর্জর বেসিক ব্যাংকের সঙ্গে বিডিবিএলকে একীভূত করার পরিকল্পনার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান দুটির সার্বিক অবস্থার উন্নতির জন্য সরকার এমন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে আলোচনা রয়েছে। যদিও একীভ‚ত করার বিষয়টি চূড়ান্ত নয়, তবে দুটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হওয়ায় একীভূত করে সুফল কতটা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে এই ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। ১০ বছর পর আমানত এসে পৌঁছেছে দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকায়। সেই সময়ে ঋণ বিতরণ ছিল এক হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল ৫৪২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ২০২১ সাল শেষে দুই হাজার বিডিবিএলের ঋণের অঙ্ক এসে দাঁড়িয়েছে ৩৮৯ কোটির ঘরে। এর মধ্যে ৭২৮ কোটি টাকা খেলাপি। হিসাব অনুযায়ী, এই খেলাপি বিতরণকৃত মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।

বিডিবিএলের ২০২১ সালে ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ব্যাংকটির ইন্টারেস্ট ইনকাম বা সুদ থেকে আয় কমে ১৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে, যা আগের বছরের একই সময় ছিল ৩৩ কোটি টাকা। পাশাপাশি কভিড মহামারিতে বেড়েছে পরিচালন ব্যয়। কারণ ২০২১ সালে ব্যাংকটির পরিচালন ব্যয় ১২২ কোটি থেকে ১২৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এর পরও গত বছর ব্যাংকটি ২২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে, যা ২০২০ সালে ছিল আট কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির স্প্রেড বা ঋণ ও আমানতের গড় সুদ হারের পার্থক্য শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ। সুতরাং যে হারে আমানত গ্রহণ করছে তার থেকে গড়ে ৯১ পয়সা বেশি হারে ঋণ বিতরণ করছে। সুতরাং ব্যাংকটির অপারেটিং কস্ট বা পরিচালন ব্যয় নির্বাহ হচ্ছে মাত্র ৯১ পয়সার মাধ্যমে।

এসব বিষয়ে জানতে ব্যাংকের এমডির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ব্যাংকটির ডিএমডি সচীন্দ্র নাথ সমাদ্দার বিডিবিএলের জিএম মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দেন। শফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিকই। এর সঙ্গে করোনাকালে অন্যান্য অনেক খরচ কমে এসেছে। যেমন অনলাইন জুম মিটিং। সরাসরি না আসলে অনেকাংশে খরচ কমে আসে। তাছাড়া অন্যান্য খরচও কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই ব্যাংকের সার্বিক মুনাফা বেড়েছে।

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ ও আদায় পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্দ ঋণ আদায়ের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আদায়ের চেষ্টা চলছে। তাছাড়া যেসব খেলাপি ঋণ নির্ধারিত সময় অতিক্রম করেছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এই মুহূর্তে ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে এক হাজার ৪০০ মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি যাত্রা করা বিডিবিএল বর্তমানে ছয়টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও ৫০টি শাখা নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। এর ৩৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ বা ৫৯৫ কোটি টাকা খেলাপি। অবশ্য এ অবস্থায়ও বেসিক ব্যাংকের মতো এই প্রতিষ্ঠানটিকে লোকসানের ভার বহন করতে হচ্ছে না।

১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পরপর দুটো ব্যাংকের জš§ হয়। একটির নাম বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (বিএসবি)। অন্যটি বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (বিএসআরএস)। এ দুটি ব্যাংক শিল্পায়নে অর্থ জোগাত। বড় শিল্প ঋণ দিত বিএসআরএস। আর স্বাভাবিক/সাধারণ শিল্প ঋণ দিত বিএসবি। দুটি এক করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)।

জানা যায়, ‘বিএসবি ও বিএসআরএস’ খারাপ ঋণ/শ্রেণিবিন্যাসিত ঋণ/খেলাপি ঋণের আখড়া হয়েছিল। খেলাপি ঋণের ভারে তাদের চলার আর কোনো উপায় ছিল না। সব শিল্প ঋণ গায়েব হওয়ার মতো অবস্থা ছিল। তাদের সব ভার নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘বিডিবিএল’। যে রোগ থেকে বাঁচার জন্য ‘বিডিবিএল’, সেই একই রোগ ‘খেলাপি ঋণ সমস্যা’ তাকে আবার ধীরে ধীরে পেয়ে বসছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০