১২ বছরে পিডিবির ভর্তুকি ৭৬,২৮৭ কোটি টাকা!

ইসমাইল আলী: এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বড় অঙ্কের লোকসান গুনছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম মূল্যে বিক্রি করায় লোকসান দিতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। এ ঘাটতি পূরণে পিডিবিকে প্রথমে ঋণ দেয়া শুরু করে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে সরাসরি অনুদান দেয়া শুরু হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ১২ বছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।

বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি-সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠকে সম্প্রতি এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এতে জানানো হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে যে ব্যয় হচ্ছে তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করায় প্রতি বছর ঘাটতি থাকছে। এ ঘাটতি পূরণে কয়েক বছর পিডিবিকে ঋণ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ১৬০ কোটি ১২ লাখ টাকা।

এ ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য না থাকায় তা ইকুইটিতে রূপান্তরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে পিডিবি। যদিও বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি। তবে কয়েক দফা বৈঠকের পর ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ভর্তুকি হিসেবে পিডিবিকে সরাসরি অনুদান দেয়া শুরু করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে চলতি অর্থবছর মার্চ পর্যন্ত অনুদান দেয়া হয়েছে ৩৩ হাজার ১২৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

বৈঠকের তথ্যমতে, পিডিবির বড় অঙ্কের লোকসান শুরু হয় মূলত ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে। সে অর্থবছর সংস্থাটির লোকসান দাঁড়ায় চার হাজার ৬২০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর সে বছর পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয় চার হাজার কোটি টাকা। পরের (২০১১-১২) অর্থবছর পিডিবির লোকসান অনেকটা বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৬৯৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। তা পূরণে সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় ৬ হাজার ৩৫৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

যদিও ২০১২-১৩ অর্থবছর পিডিবির লোকসান কিছুটা কমে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৪৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর তা পূরণে সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় চার হাজার ৪৮৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। পরের (২০১৩-১৪) অর্থবছর লোকসান আবার বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৮০৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর সে অর্থবছর সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় ছয় হাজার ১০০ কোটি টাকা।

২০১৪-১৫ অর্থবছর পিডিবির লোকসান আরও বেড়ে যায়। সে অর্থবছর সংস্থাটির লোকসান দাঁড়ায় সাত হাজার ২৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। তবে পুরোনো ঘাটতিসহ ওই অর্থবছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় আট হাজার ৯৭৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছর পিডিবির লোকসান কমে দাঁড়ায় তিন হাজার ৮৭৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সে অর্থবছর সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় চার হাজার ৩৬৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

২০১৬-১৭ অর্থবছর পিডিবির লোকসান আবারও বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ৪৩৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর ওই অর্থবছরের সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় তিন হাজার ৯৯৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান ছিল রেকর্ড আট হাজার ৩৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর সে বছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল পাঁচ হাজার ৪৮৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সে অর্থবছরই প্রথম অনুদান হিসেবে ভর্তুকি দেয়া হয়।

পরের (২০১৮-১৯) অর্থবছর লোকসান কিছুটা কমে দাঁড়ায় আট হাজার ১৪১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর ওই অর্থবছর সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় সাত হাজার ৫০০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান আরও কিছুটা কমে দাঁড়ায় সাত হাজার ৪৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর ভর্তুকি দেয়া হয় সাত হাজার ৪৩৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

এদিকে গত অর্থবছর পিডিবির লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় রেকর্ড ১১ হাজার ৭১৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আর গত অর্থবছর পিডিবি নিট ভর্তুকি পায় আট হাজার ৯৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এদিকে চলতি অর্থবছর জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে পিডিবির লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। আর এ সময়ে সংস্থাটিকে নিট ভর্তুকি দেয়া হয়েছে আট হাজার ৮৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

উল্লেখ্য, ২০১০-১১ অর্থবছরের আগে বিদ্যুৎ খাতে লোকসান অনেক কম ছিল। ফলে সে সময় ভর্তুকির বোঝাও কম ছিল। এর মধ্যে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান ছিল ৮২৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা ও ভর্তুকির পরিমাণ ছিল এক হাজার ছয় কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আর ২০০৯-১০ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান ছিল ৬৩৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ও ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৯৯৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০