১৩২১ নারী ধর্ষণের শিকার ২০২১ সালে!

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১ সালে সারাদেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট এক হাজার ৩২১ নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৭ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন নয়জন। ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২১’ পর্যালোচনায় এ তথ্য জানায় সংগঠনটি। গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২১: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।

২০২০ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এক হাজার ৬২৭ নারী এবং ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪১৩ নারী।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিগত বছরের মতো এ বছরও করোনা মহামারির মধ্যে ধর্ষণ, যৌন হযরানি, পারিবারিক নির্যাতন, সালিশ ও ফতোয়াসহ নারীর প্রতি বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

ধর্ষণের শিকার নারীদের অনেককে বিচার চাইতে গিয়ে হুমকি-ধমকিসহ নানাভাবে চাপের মুখোমুখি হতে হয় বলে জানিয়ে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও গ্রামে ৯ অক্টোবর এক গৃহবধূ ও তার চতুর্থ শ্রেণিপড়–য়া মেয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ১১ অক্টোবর ভুক্তভোগী গৃহবধূ আটজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। ভিকটিম পরিবার সূত্রে জানা যায়, মামলার করার পর থেকে আসামিপক্ষের লোকজন মামলা তুলে নেয়ার জন্য তাদের হুমকি-ধমকিসহ নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আসকের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির ও সহকারী সমন্বয়কারী অনির্বাণ সাহা।

সালিশের মাধ্যমে নির্যাতনের বিষয় তুলে ধরে অনির্বাণ সাহা বলেন, ২০২১ সালে সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে ১২ নারী নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে সালিশে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন তিন নারী এবং নির্যাতন-পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যা করেন দুই নারী। ২০২০ সালে সালিশ ও ফতোয়ার শিকার হযয়েছিলেন মোট আট নারী।

এছাড়া বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুম, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার পরিস্থিতি, মতপ্রকাশের অধিকার, নারী অধিকার, শিশু অধিকার, শ্রমিক অধিকার রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সীমান্তহত্যা ও নির্যাতন এবং গণপিটুনিসহ বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয় পর্যালোচনায়।

লিখিত বক্তব্যে ১০টি সুপারিশ তুলে ধরে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করা, গুম, অপহরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, নাগরিকদের মত প্রকাশের অধিকার খর্ব না করাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এসব সুপারিশ রয়েছে।

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব মো. নূর খান। ২০২১ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, এ বছর মানবাধিকার পরিস্থিতি এক কথায় সহ্যক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। কোনো ঘটনারই নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার হয় না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল, পরিচালক নীনা গোস্বামী, জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির প্রমুখ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০