নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির তিন বছরের কমিশন বাবদ আয়ের ১৩২ কোটি টাকার কোনো হিসাব পায়নি অডিট কমিটি। নানা অনিয়মের মাধ্যমে এ অর্থ সমিতির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে বর্তমান কমিটি।
গতকাল রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতি বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আতাউল করিম ও সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন সরকারসহ সমিতির অন্য সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সমবায় অধিদপ্তর থেকে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী সমিতির ২০১৮-২০ সময়ের অডিট রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চুক্তি মোতাবেক পিপিআই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসা থেকে রাজস্ব আদায়ে ঠিকাদারি বিল বাবদ সমিতি ৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ১৭৩ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৪ কোটি ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯০ টাকাসহ মোট ১৩৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯৬৩ টাকা পেয়েছে। এ অর্থ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে হিসাব বিবরণীতে মাত্র এক কোটি ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৩ টাকা হিসাবভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের অবশিষ্ট ১৩২ কোটি চার লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকার কোনো হিসাব নেই। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ সমিতির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি আত্মসাৎ করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
২০১৬ সালে সমিতির সভাপতি ছিলেন হাফিজ উদ্দিন ও সম্পাদক আতাউর রহমান মিয়া এবং ২০১৯ সালে সভাপতি ছিলেন মো. আক্তারুজ্জামান ও সম্পাদক ছিলেন মো. জাকির হোসেন।
এ সময় সমিতির এ দুই কমিটির পিপিআই পরিচালনা পর্ষদে হাফিজ উদ্দিন, মো. আক্তারুজ্জামান ও মিঞা মো. মিজানুর রহমানসহ আরও বেশ কয়েক জন সদস্য বিধিবহির্ভূত ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে খরচ ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করছে বর্তমান কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়েছে, কমিটি ও পরিচালনা পর্ষদ ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে সমিতি ও পিপিআই প্রকল্পের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা হিসাব থেকে ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই প্রায় ৪৪ কোটি ২১ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে, যার হিসাবও পাওয়া যায়নি বলে অডিট রিপোর্টে উঠে এসেছে।
বিগত ব্যবস্থাপনা কমিটির বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়েছে, ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট থেকে নিয়মিত ও বৈধ কমিটি না থাকায় সমিতি ও সমিতির প্রকল্প পিপিআইয়ের অর্জিত তহবিল সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে ব্যয় বা বণ্টন হয়নি। এর আগেও সমিতির অর্থ নয়-ছয় হওয়ার অনেক আলামত রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ আইনগত অধিকার না থাকলেও সংস্থাটির কর্মচারীদের সমিতি হওয়ায় নৈতিক দিক বিবেচনা করে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে ঠিকাদারি বিল বাবদ ঢাকা ওয়াসা থেকে পাওয়া ৪৪৫ কোটি টাকা, সমিতির মিটার বিক্রয়লব্ধ আয় ও অন্যান্য আয় কীভাবে কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে এবং সম্পদ ও পরিসম্পদের হিসাব চেয়ে ২০১৯ সালে ৩০ এপ্রিল সমিতির তৎকালীন সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে চিঠি দেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবে পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে সমিতি কোনো সাড়া দেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী এবং এ লক্ষ্যে কাজ করছে। সমিতির বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটিও ঢাকা ওয়াসার কর্মচারী হিসেবে সংস্থার নীতির সঙ্গে একমত পোষণ করে এবং সমিতির দুর্নীতির বিষয়েও উক্ত নীতিতে অটল।
আরও বলা হয়েছে, এমন অবস্থায় যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতি তথা জনগণের টাকা নয়-ছয় করার কাজে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করুন। আর নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা সমিতির অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অনিয়মকারীদের চিহ্নিত করার জন্য সদা সচেষ্ট তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করার অপরাধে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলা, কারণ দর্শানোসহ অন্যান্য নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা তুলে নেয়ার দাবি জানানো হচ্ছে।