নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন ধরে দেশে ফোম, হোমটেক্স, ম্যাট্রেস, কেমিক্যাল ও প্রোপার্টি খাতে ব্যবসা করছে সোয়ান গ্রুপ। তবে এ গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিক্রয় গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা) এ গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৩৬ কোটি টাকার বিক্রয় তথ্য গোপনের তথ্য পেয়েছে, যাতে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে। ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গতকাল পৃথক মামলা করা হয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, সোয়ান গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ১৩৬ কোটি পাঁচ লাখ টাকার গোপন বিক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। এতে প্রায় ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে। সোয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (ফোম) ও সোয়ান কেমিক্যালস লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠান গাজীপুরের কালিয়াকৈর যুগিরচালায় অবস্থিত। আর সোয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (ম্যাট্রেস) প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠান তিনটি মূলত ফোম, ম্যাট্রেস, কেমিক্যালসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করে।

ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক বলেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত সেবা বিক্রি গোপন করে চালান ব্যতীত সেবা সরবরাহ করে দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারের বিপুল ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ নভেম্বর সংস্থার উপপরিচালক মোহাম্মদ সাজেদুল হকের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটির গ্রুপের প্রধান কার্যালয় গুলশানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে গোয়েন্দার দল দেখতে পায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে মাসিক দাখিলপত্রে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট-সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করেন। এরপর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে ধারণকৃত তথ্যাদি যাচাই করে সেবা বিক্রি-সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি লুক্কায়িত অবস্থায় জব্দ করা হয়। এসব তথ্য ভ্যাট দলিলাদির সঙ্গে ব্যাপক অসামঞ্জস্য দেখা যায়।
তদন্ত অনুসারে, সোয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ১০৫ কোটি ৬০ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩৮ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে (গাজীপুর-৩) মাসিক রিটার্নে ৩১ কোটি ১৬ লাখ চার হাজার ২৩৪ টাকা বিক্রিয় হিসাব প্রদর্শন করেছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রির পার্থক্য পাওয়া যায় ৭৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৪ টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এক্ষেত্রে ১১ কোটি ১৬ লাখ ৭১ হাজার ৮৯৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। এ ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক দুই শতাংশ হারে ৯ কোটি ২১ লাখ ২১ হাজার ৮৯৯ টাকা সুদ প্রযোজ্য।

এছাড়া সোয়ান কেমিক্যালস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৪৭ কোটি ছয় লাখ ৩০ হাজার ৩৩৯ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট সার্কেল (গাজীপুর-৩) এ মাসিক রিটার্নে ২৯ কোটি ১৩ লাখ ১০ হাজার ৯২২ টাকা বিক্রিয় হিসাব প্রদর্শন করেছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ১৭ কোটি ৯৩ লাখ ১৯ হাজার ৪১৭ টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এক্ষেত্রে দুই কোটি ৬৮ লাখ ৯৭ হাজার ৯১৩ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে। এ ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক দুই শতাংশ হারে দুই কোটি দুই লাখ ৬৩ হাজার ৫৫৪ টাকা সুদ প্রযোজ্য।

তাছাড়া সোয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৮৬ কোটি ৪০ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪৯ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে (তেজগাঁও) মাসিক রিটার্নে ৪২ কোটি ৭৪ লাখ তিন হাজার ৭৮৭ টাকা বিক্রয় হিসাব প্রদর্শন করেছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ৪৩ কোটি ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬২ টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এক্ষেত্রে ছয় কোটি ৫৪ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮৪ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। এ ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক দুই শতাংশ হারে পাঁচ কোটি চার লাখ ৬৪ হাজার ৭৫২ টাকা সুদ প্রযোজ্য।

ড. মইনুল খান জানান, তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠান তিনটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ২০ কোটি ৪০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৩ টাকা এবং সুদ বাবদ ১৬ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ২০৫ টাকাসহ সর্বমোট ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ ১৯ হাজার ৬৯৮ টাকা রাজস্ব পরিহারের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়। এজন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে।
অপরদিকে, এ বিষয়ে গ্রুপের কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।