নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: ভোজ্যতেলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইলিয়াছ ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেড ১৫ বছর আগে ভোজ্যতেল আমদানির জন্য ইস্টার্ন ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ নেয়; যা ২০১৩ সালে খেলাপি হয়। বকেয়া পাওনা পরিশোধে একাধিক বারবার তাগিদ দিলেও গ্রাহক পাওনা পরিশোধ করেনি। গতকাল চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত প্রতিষ্ঠানটির ১৩ জন পরিচালককে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, মোহাম্মদ ইলিয়াস ১৯৪৬ সালে ব্যবসা শুরু করেন। ইলিয়াছ ব্রাদার্স স্বাধীনতার আগে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় আসে। আর স্বাধীনতা-পরবর্তী ইউনিলিভারের প্রধান পরিবেশক হয়ে ব্যবসা করে প্রায় তিন যুগ। এরপর ইউনিলিভারের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে বিভিন্ন শিল্প গড়ে তোলে। এর মধ্যে গ্রুপটি দাদা সয়াবিন তেল, ড্রিংকিং ওয়াটার, গ্লাস, নিটিংসহ একাধিক ব্যবসা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ ও ২০০৭ সালে ভোজ্যতেলের বাজারের দেশের মোট আমদানির ১৮ শতাংশ তেল এককভাবে আমদানি করে এমইবি গ্রুপের দাদা ব্র্যান্ডের। এখন ভোজ্যতেলের বাজারের এই প্রতিষ্ঠানটির অবস্থানই নেই। পারিবারিক দ্বন্দ্বে ব্যবসায়িকভাবে ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে থাকে। আর ২০০৯-১০ সালে ব্যাংকঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে একের পর এক তা খেলাপি হয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৬৫ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় খেলাপি পাওনা ছিল ৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা বর্তমানে সুদাসলে ১৬৫ কোটি টাকা হয়েছে।
সম্প্রতি সংসদে প্রকাশিত দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকায় প্রথমদিক থেকে চার নম্বর অবস্থানে ইলিয়াছ ব্রাদার্সের।
চট্টগ্রাম অর্খঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রেজাউল করিম বলেন, ইলিয়াছ ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেড ভোজ্যতেল আমদানির জন্য ইস্টার্ন ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেয়। কিন্তু এ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। বকেয়া পাওনা পরিশোধে বারবার তাগাদা দিলেও খেলাপি গ্রাহক পাওনা পরিশোধ করেনি। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের আরও মামলা চলমান আছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ইলিয়াছ ব্রাদার্স ১৫টি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া ৯৬৫ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকেরই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৮০ কোটি টাকা। এছাড়া এবি ব্যাংকের
ঋণ রয়েছে ৬১ কোটি ৯৯ লাখ, ব্যাংক এশিয়ার ৩৬ কোটি ৮৩ লাখ, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৭১ কোটি ৮০ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৪২ কোটি ৭০ লাখ, ওয়ান ব্যাংকের ২৮ কোটি ৫৪ লাখ, পূবালী ব্যাংকের ৬ কোটি ১৯ লাখ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ২২ কোটি ৪৩ লাখ ও দ্য সিটি ব্যাংকের ৫৬ কোটি টাকাসহ এনসিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল, ব্যাংক এশিয়া, ওয়ান ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি পাওনা রয়েছে, যা সুদাসলে আরও বেড়েছে।