পিডিবির প্রতিবেদন

১৩ বছরে বিদ্যুৎ গ্রাহক বেড়েছে ২৮১ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ। গত সেপ্টেম্বরশেষে দেশে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়ায় (নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ) ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ সময় বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার কোটি ১২ লাখ। দ্রুতই শতভাগ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রায় ১৩ বছরে দেশে বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে ২৮১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

তথ্যমতে, গত বছর সেপ্টেম্বরশেষে দেশে বিদ্যুৎ গ্রাহক ছিল তিন কোটি ৮৭ লাখ। অর্থাৎ এক বছরে বিদ্যুৎ গ্রাহক বেড়েছে ২৫ লাখ। আর ২০০৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকালে বিদ্যুৎ গ্রাহকসংখ্যা ছিল এক কোটি আট লাখ। অর্থাৎ ১৩ বছরে দেশে বিদ্যুৎ গ্রাহক বেড়েছে তিন কোটি চার লাখ। এছাড়া ২০০৯ সালের শুরুতে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর হার ছিল মাত্র ৪২ শতাংশ। এতে ১৩ বছরে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী বেড়েছে ৫২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

আবাসিকের পাশাপাশি ১৩ বছরের ব্যবধানে দেশে সেচ গ্রাহক বেড়েছে দুই লাখ ১২ হাজার। ২০০৯ সালের শুরুতে এ খাতে গ্রাহক ছিল দুই লাখ ৩৪ হাজার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৪৬ হাজার। আর ২০০৯ সালের শুরুতে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ২৭টি। চলতি বছর সেপ্টেম্বরশেষে তা দাঁড়ায় ১৪৬টি।

বিদ্যুৎ সুবিধাভোগীর পাশাপাশি এর মাথাপিছু ব্যবহার আড়াইগুণ ছাড়িয়ে গেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০২০-২১ অর্থবছর দেশে মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬০ কিলোওয়াট ঘণ্টা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা।

এদিকে ২০০৯ সালের শুরুতে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল চার হাজার ১৩০ মেগাওয়াট। গত সেপ্টেম্বরশেষে তা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৩১ মেগাওয়াট। তবে ক্যাপটিভ দুই হাজার ৮০০ ও অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য উৎস ৪০৪ মেগাওয়াট যোগ করলে দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ২৫৩ মেগাওয়াট।

সূত্র জানায়, শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্য পূরণের পথে এখনও বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের বাইরে থাকা মানুষগুলোর জন্য দ্রুত বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবারের এখনও বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রয়োজনে পৃথক প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনাও দেয়া হয়।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ শেয়ার বিজকে বলেন, দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে দ্রুত কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এক দিনে আবাসিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া এক্ষেত্রে অন্যতম উদ্যোগ। এরই মধ্যে ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসে গেছে। বাকিদেরও দ্রুত এ সুবিধার আওতায় আনা হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলো কাজ করে যাচ্ছে।

তথ্যমতে, গত ১৩ বছরে দেশে ১৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ১৭ হাজার ৮৯ মেগাওয়াট। তবে উৎপাদন সক্ষমতা দ্রুত বাড়লেও বিদ্যুৎ চাহিদা সে অনুপাতে বাড়েনি। গত ২৭ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ১৩ হাজার ৭৯২ মেগাওয়াট। গ্রীষ্ম মৌসুমে গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলেও শীত মৌসুমে সাত থেকে আট হাজারে নেমে আসে।

এদিকে উৎপাদন সক্ষমতার পাশাপাশি দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন সক্ষমতাও বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বরশেষে দেশে গ্রিড উপ-কেন্দ্র ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ২৫৯ এমভিএ। ২০০৯ সালের শুরুতে তা ছিল ১৫ হাজার ৮৭০ এমভিএ। আর বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ১৫ হাজার কিলোমিটার। ২০০৯ সালের শুরুতে এর পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার। এছাড়া বর্তমানে দেশে সঞ্চালন লাইন দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৯৭৭ সার্কিট কিলোমিটার। ২০০৯ সালে এর পরিমাণ ছিল আট হাজার সার্কিট কিলোমিটার।

উল্লেখ্য, বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ফলে দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ লোকসান তথা সিস্টেম লস ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেম লস ছিল ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে আট দশমিক ৪৮ শতাংশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০