১৩ ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

রোহান রাজিব:বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংকারদের দুই সংগঠন এবিবি ও বাফেদার মধ্যস্থতায় ডলার কেনার দর ঠিক করেছে ব্যাংকগুলো। রেমিট্যান্স কেনায় সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা এবং রপ্তানি বিল নগদায়নে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সার বেশি না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ দরে ডলার কিনছে না অনেক ব্যাংক। ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে বাড়তি দরে ডলার কেনার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্রমতে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকারদের দুই সংগঠনের মধ্যস্থতায় ডলার কেনার যে দর ঠিক করা হয়েছে, তা অনেক ব্যাংক মানছে না। তাই যারা ঘোষিত দর মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্তে নেমেছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্তে নামা হয়েছে। এর মধ্যে একটি সরকারি ব্যাংক, বাকি ১২টি বেসরকারি ও বিদেশি খাতের ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক শেয়ার বিজকে বলেন, কিছু ব্যাংকের বিরুদ্ধে ঘোষিত দরের চেয়ে ডলারে বাড়তি দর নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করে দেখছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার কেনায় এর আগে কয়েক দফা কিছু ব্যাংককে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউ। সর্বশেষ গত ৬ জুলাই বাড়তি দরে ডলার কেনার কারণে সাতটি ব্যাংক এবং ৯টি এক্সচেঞ্জ হাউসের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে সংস্থাটি। ওই বৈঠকে ব্যক্তিগতভাবে ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জরিমানা করা হবে বলেও জানানো হয়। তার আগে গত ২ এপ্রিল ব্যাংকের এমডিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এ নিয়ে সতর্ক করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার কেনার বিষয়ে ওই দিন ১১টি ব্যাংকের এমডিকে নিয়ে আলাদাভাবে বৈঠক করে সতর্ক করা হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে রেমিট্যান্স এবং ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায় রপ্তানি বিল নগদায়ন করার কথা। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল নগদায়নের গড় দরের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করতে পারবে ব্যাংক। তবে কোনো অবস্থায় তা ১০৯

টাকার ওপরে যাওয়া যাবে না। তবে দেখা যাচ্ছে, কিছু ব্যাংক ঘোষিত দর না মেনে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৩ টাকা দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে। এছাড়া ১০৯ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত না মানায় ৩ জুলাই ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে চিঠি দেয় বাফেদা ও এবিবি।

দর ঠিক করে দেয়ার পরও ব্যাংকগুলো বাড়তি দরে ডলার কেনা উচিত কি না জানতে চাইলে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমরানুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, অতিরিক্ত মুনাফা করার জন্য বাড়তি দর নেয়া ঠিক নয়। এবিবি ও বাফেদা যেটা বেঁধে দিয়েছে, তা মেনে ব্যবসা করা উচিত। আগে পরিস্থিতি খারাপ ছিল, তখন অনেক ব্যাংক বাধ্য হয়ে এনেছে। তবে এখন যেহেতু পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে, তাই এখন আনা উচিত নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি খাতের অপর এক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, রেমিট্যান্স আহরণ এবং সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সব ব্যাংকের সক্ষমতা এক নয়। যে কারণে একই দর দিলে অনেক ব্যাংক কোনো রেমিট্যান্স পাবে না। কারণ অনেকের এক্সচেঞ্জ হাউস বা অনেক সোর্স রয়েছে। তাদের রেমিট্যান্স আহরণ বেশি হচ্ছে। অবশ্য বাড়তি দর দেয়ার তালিকায় এমন ব্যাংক রয়েছে, যারা রেমিট্যান্স আহরণে প্রথম সারিতে রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ডলারের ওপর চাপের কারণেই এমন হচ্ছে। যদিও সংকট কাটাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ এবং সরকারি কেনাকাটায় কড়াকড়ি করা হয়েছে। এতে গত মে পর্যন্ত আমদানি ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। প্রবাসী আয় বেড়েছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ। এর পরও ডলার সংকট না কাটার প্রধান কারণ বিদেশি ঋণ ব্যাপকভাবে কমছে। গত মে পর্যন্ত আর্থিক হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ২৫৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যেখানে উদ্বৃত্ত ছিল এক হাজার ৩৩৭ কোটি ডলার। সংকট কাটাতে গত অর্থবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে। চলতি অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। তবে তা আগের চেয়ে অনেক কম। এখন প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৬০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০