সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম ইপিজেডের তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ অ্যান্ড বি আউটওয়্যার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটে নিবন্ধিত হয়। এরপর কয়েক বছর আমদানি-রপ্তানি করলেও পরিচালনার ব্যর্থতায় প্রতিষ্ঠানটি আর আলোর মুখ দেখেনি। তারপর বিপুল পরিমাণ বন্ডেড পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করে ১৪৩ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ।
সূত্রে জানা যায়, এ অ্যান্ড বি আউটওয়্যার লিমিটেডের পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানির আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে কোম্পানিতে বিনিয়োগ রপ্তানি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সামগ্রিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম বেপজা কর্তৃপক্ষ বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির লিজ চুক্তি বাতিল করে। তারপর প্রতিষ্ঠানটির স্থাপনা, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য পণ্য ইনভেন্ট্রি ও মূল্য নিরূপণ করে নিলাম করে দেয় বেপজা। নিলামের পর বেপজা কর্তৃপক্ষ কাস্টমসের বকেয়া পাওনার বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটকে অবহিত করলে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট প্রতিষ্ঠানটির ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অনিষ্পন্ন বার্ষিক নিরীক্ষা সম্পন্ন করে।
এতে দেখা যায়, মজুতসহ প্রতিষ্ঠানটির মোট আমদানিকৃত ফেব্রিক্স ও অ্যাকসেসরিজের পরিমাণ ১৪ হাজার ১২৩ দশমিক ৯১ মেট্রিক টন, যার বিপরীতে সাত হাজার ২৮৬ দশমিক ৭২ মেট্রিক টন রপ্তানি করলেও ছয় হাজার ৭৩৭ দশমিক ২০ মেট্রিক টন কাঁচামাল অবশিষ্ট থেকে যায়। এছাড়া ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর করা বেপজার নিলামের ইনভেন্ট্রিতে দেখা যায়, ৬৬ হাজার ২৯১ কেজি ফেব্রিক্স (ফিনিশড প্রোডাক্ট ব্যবহƒত) এবং ৩৩ হাজার ৬৯৬ কেজি অ্যাক্সেসরিজ (ফিনিশড প্রোডাক্ট ব্যবহƒত) ছাড়া অন্য কোনো কাঁচামাল মজুত নেই। অর্থাৎ দলিলপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ছয় হাজার ৭৩৭ দশমিক ২০ মেট্রিক টন কাঁচামাল অবৈধভাবে আপসারণ করা হয়েছে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মেয়াদে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত ফেব্রিক্স ও অ্যাক্সেসরিজের অবৈধভাবে অপসারিত পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য ২২৭ কোটি এক লাখ ৯৩ হাজার টাকা। আর এই পণ্যের বিপরীতে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, তিন শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি), ২০ শতাংশ সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি (এসডি), ১৫ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট), পাঁচ শতাংশ অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) ও চার শতাংশ অ্যাডভান্স ট্রেড (এটিভি) মিলে মোট সরকারি রাজস্ব দাঁড়ায় ১৪৩ কোটি ২৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি দুই বছর ধরে বন্ধ আছে, আর মালিকপক্ষ দেশের বাইরে রয়েছে। তবে কোন দেশে আছে, তা সঠিকভাবে কারও জানা নেই। তাই সম্প্রতি বেপজা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে লিজ চুক্তি বাতিল করেছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালের পর আর অডিটও করায়নি। এদিকে অবৈধ পণ্য অপসারণের মাধ্যমে বন্ড লাইসেন্সে বিধিমালা লঙ্ঘন করে ১৪৩ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাই চলতি বছরের ২২ এপ্রিল এই টাকার দাবিনামাসহ কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট।
নোটিসে সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যাক্তিগত শুনানি চাইলে লিখিত জবাবে উল্লেখ করতে বলা হয়ছে। আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো জবাব পাওয়া না গেলে সরকারি রাজস্ব সংরক্ষণ ও ন্যায়-বিচারের স্বার্থে পারিপার্শি^ক অবস্থা ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ লাপাত্তা এবং দেশে কেউ নেই। তাই প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানায় এবং মালিকপক্ষ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্থায়ী ঠিকানায় চিঠি দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, এ অ্যান্ড বি আউটওয়্যার লিমিটেড চট্টগ্রাম ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানটি দুই বছর ধরে বন্ধ আছে। প্রতিষ্ঠানটি গত পাঁচ বছর কোনো অডিট করায়নি। সম্প্রতি বেপজাও প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে লিজ চুক্তি বাতিল করেছে। তাই আমরা গত মাসে ২০১৫-২০২০ সময়ের অডিট সম্পন্ন করি। এতে ১৪৩ কোটি টাকা দায়দেনার উদ্ভব হয়েছে। মালিকপক্ষ দেশের বাইরে থাকায় অডিটে কোনো সহযোগিতা করেনি। তাই অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল£ থেকে আমদানি-রপ্তানি তথ্য এবং ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে অডিট সম্পন্ন করা হয়। তারপর ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ঠিকানায় দাবিনামা পেশ করে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে।