নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ডিসেম্বরে আর্থিক বছর শেষ হওয়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম চলছে। গত দুই সপ্তাহে ১৪টি কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে আগের বছরের তুলনায় লভ্যাংশ বেড়েছে মাত্র ছয়টি কোম্পানির। আর বাড়েনি আট কোম্পানির লভ্যাংশ। স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
লভ্যাংশ বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আরএন স্পিনিং লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, সিঙ্গার বিডি লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো এবং প্রাইম ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। লভ্যাংশ অপরিবর্তিত রয়েছে আইপিডিসি ফাইন্যান্স, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট লিমিটেড ও প্রাইম ফাইন্যান্স লিমিটেড। এছাড়া ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের লভ্যাংশ কমেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ২০১০ সালে ধসে ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বর্তমানে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিভিডেন্ড মৌসুম চলছে। এসব কোম্পানি থেকে বিনিয়োগকারীরা আগের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ প্রত্যাশা করছেন। সম্প্রতি দুয়েকটি ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। সেসব কোম্পানি আগের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ প্রদান করায় সেসব শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। অন্যদিকে কম লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানির শেয়ারে আগ্রহ কমবে বলে মনে করছেন তারা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘যেসব কোম্পানির আয় ভালো, তারা আগের বছরের চেয়ে ভালো লভ্যাংশ দিতে পারছে। তবে কেউ কেউ রিজার্ভ ভেঙেও ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার চেষ্টা করছে। লভ্যাংশ ভালো দিলে ওই কোম্পানির শেয়ারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ে। সেক্ষেত্রে শেয়ারদরের দিকে বিনিয়োগকারীরা খেয়াল করেন না। অন্যদিকে যেসব কোম্পানি আগের বছরের চেয়ে কম বা সমপরিমাণ লভ্যাংশ দিচ্ছে কিংবা দেবে সেসব শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারানোর আশঙ্কা আছে।’
তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইডিএলসি ফাইন্যান্স সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আগের বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২৫ শতাংশ। সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটির কনসোলিডেটেড নিট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭৮ কোটি টাকা এবং শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ৭ টাকা ৮ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৪৫ কোটি টাকা এবং ইপিএস ৫ টাকা ৮১ পয়সা।
আরএন স্পিনিং তিন বছর পর ২০ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক সমাপ্ত হিসাববছরে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। ব্যাংকটি আগে বছর বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল। সমাপ্ত হিসাববছরে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নিট সম্পদের মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা, শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ৩ টাকা ১ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে নিট সম্পদের মূল্য ছিল এক হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা এবং ইপিএস ছিল এক টাকা ৯০ পয়সা।
সিঙ্গার বিডি লিমিটেড বিনিয়োগকারীদের জন্য আগের বছরের চেয়ে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। সমাপ্ত হিসাববছরে প্রতিষ্ঠানটির নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) ছিল ১৯৪ কোটি টাকা, শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ২৫ টাকা ৩৯ পয়সা এবং ইপিএস ছিল ৭ টাকা ১২ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে নিট সম্পদমূল্য ছিল ১৪১ কোটি টাকা, শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ১৮ টাকা ৪৮ পয়সা এবং ইপিএস ৪ টাকা ৮১ পয়সা।
তাছাড়া ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো লিমিটেড সমাপ্ত হিসাববছরে ৬০০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। আগের বছর কোম্পানিটি ৫৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল। কোম্পানিটির সমাপ্ত বছরে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ৩১৪ টাকা ৭১ পয়সা এবং ইপিএস ছিল ১২৬ টাকা ৩৭ পয়সা। আগের বছর কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৯৭ টাকা ৪৩ পয়সা।
প্রাইম ইন্স্যুরেন্স সমাপ্ত হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৩ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আগের বছর বিনিয়োগকারীদের সাড়ে ১২ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
জানা যায়, যেসব কোম্পানির আয় বেশি, তারাই আগের বছরের চেয়ে বাড়িয়ে লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। আবার অনেকে তাদের সুনাম রক্ষা করার জন্য রিজার্ভ ভেঙে লভ্যাংশ ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। যেসব কোম্পানি এখনও লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি, সেগুলো থেকেও ভালো লভ্যাংশ প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের। যেহেতু ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ে বেশিরভাগ ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। আর এতে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনার রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
জানা গেছে, আইপিডিসি ফাইন্যান্স এবং সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) দুই প্রতিষ্ঠানই আগের হিসাববছরের মতো এবারও ২০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তবে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড গত সমাপ্ত হিসাববছরে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে; যা আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ কম। আগের বছর প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল। একই চিত্র রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রেও। গত সমাপ্ত হিসাববছরে প্রতিষ্ঠানটি ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আগের বছর কোম্পানিটি ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
এদিকে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড আগের বছরের মতো এবারও ১৫ শতাংশ, লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড ৩১০ শতাংশ এবং হাইডেলবার্গ সিমেন্ট লিমিটেড বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। গত সমাপ্ত বছরে প্রাইম ফাইন্যান্স বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:29 pm
১৪ কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা, বেড়েছে ৬টির
শেষ পাতা ♦ প্রকাশ: