ইসমাইল আলী: দেশের জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা। রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটিতে ৬৫২টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৩৮৯ জন। শূন্য রয়েছে ৪০ দশমিক ৩৩ শতাংশ বা ২৬৩টি পদ। একই অবস্থা জ্বালানি তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানদের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের। ১ হাজার ৭৫৩টি পদের বিপরীতে এ প্রতিষ্ঠানে শূন্য রয়েছে ১ হাজার ৪০টি। অর্থাৎ বাপেক্সের ৫৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ পদই শূন্য, যার মধ্যে কারিগরি পদ রয়েছে উল্লেখযোগ্য। এতে ব্যাহত হচ্ছে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান।
একই অবস্থা পাথর উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির। প্রতিষ্ঠানটির ৭৬৬টির মধ্যে ৬১৬টি পদ শূন্য। একই জেলার কয়লা আহরণের দায়িত্বে থাকা বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ২৭৮টির মধ্যে ১৩৩টি পদ শূন্য। দুই প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ পদই কারিগরি। এতে একদিকে ব্যাহত হচ্ছে খনিজসম্পদ আহরণ; অন্যদিকে বাড়ছে আমদানির পরিমাণ।
সম্প্রতি জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে অনুষ্ঠিত জনবল সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে জানানো হয়, পেট্রোবাংলা ও এর অধীন ১৩ প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত পদ রয়েছে ১৪ হাজার ৬৮টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৮ হাজার ৬৩ জন। আর শূন্য পদ রয়েছে ৬ হাজার ৫টি। অর্থাৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ খাতে প্রায় ৪৩ শতাংশ পদ শূন্য রয়ে গেছে।
তথ্যমতে, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাস বিতরণকারী সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির। প্রতিষ্ঠানটির ১৩৩টি পদের মধ্যে মাত্র ১১ জন কর্মরত রয়েছেন। এরা সবাই প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সদস্য। ১২২টি পদ শূন্য রয়েছে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির। এজন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে চলছে এর অপারেশনাল কার্যক্রম।
সবচেয়ে কম পদ শূন্য রয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে থাকা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির। প্রতিষ্ঠানটির ৮৯৩টির মধ্যে ১৫৪টি বা ১৭ শতাংশ পদ শূন্য। আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৩ হাজার ৬২৯টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ২ হাজার ২৪৪ জন। শূন্য রয়েছে ১ হাজার ৩৮৫টি পদ।
গ্যাস সরবরাহ ও বিতরণের দায়িত্বে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের ৯০৭টি পদের মধ্যে শূন্য ৪১৪টি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির ৩০৭টি পদের মধ্যে ১৪৭টি, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ১ হাজার ১০৬টি পদের মধ্যে ৩৫৬টি ও জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের ৯২০টির মধ্যে ৩৭৪টি পদ শূন্য।
এর বাইরে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির ৩৯৪টি পদের মধ্যে ১২১টি শূন্য। এছাড়া গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা দুই কোম্পানির জনবলের বড় অংশই শূন্য। এর মধ্যে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির ১ হাজার ৩৯০টি পদের মধ্যে ১ হাজার ৪০টি শূন্য। আর সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের ৯৪০টি পদের মধ্যে ৩৫৫টি শূন্য।
জানতে চাইলে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, পেট্রোবাংলা, বাপেক্সসহ ১৪টি প্রতিষ্ঠানে বেশকিছু পদ আগে থেকেই শূন্য ছিল। এছাড়া গত দুই বছরে অনেকে অবসরে গেছেন। এতেও বেশকিছু পদ শূন্য হয়েছে। এসব শূন্য পদে দ্রুত জনবল নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এটি একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ও কারিগরি শূন্য পদগুলো আগে পূরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Add Comment