নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে ১৪ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে কাজে নিয়োগ দেয়া যাবে না বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। গতকাল সচিবালয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে শিশুদের বয়সসীমা ১৪ বছর কমিয়ে আনা যেতে পারে, তবে এর চেয়ে কম নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের জন্য ১৪ বছর উপযুক্ত বলে মনে করে।’
গতকাল আইএলও কনভেনশন-১৩৮ অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। যা ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুকে কাজে নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বয়সসীমা ১৪ বছর হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘মূল সমস্যা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করতে সাধারণত ১৫ বছর সময় লাগে এবং সে কারণে ১৫ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে চাকরি দেয়া যায় না।’
বিশেষ করে আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য ১৪ বছর উপযুক্ত।’ তিনি বলেন, ‘যেসব শিশুর বয়স ১৪ বা ১৫ বছর, তাদের কোনো অবস্থাতেই ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক কাজে নিযুক্ত করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আইএলও কনভেনশন-১৩৮’ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৩টি দেশ এতে স্বাক্ষর করেছে।
‘শিশুরা এমন কার্যকলাপে জড়িত হতে পারে না, যা দুর্ঘটনা বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই বয়সের শিশুরা চাকরি করলেও তাদের প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের বিয়ে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না এবং এই বয়সে যে কেউ অপরাধ করবে তাকে শিশু অপরাধী বলে গণ্য করা হবে।’ ১৪ বা ১৫ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে চাকরি দিলে কী শাস্তি হবেÑএমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আনা রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪-এর খসড়াও অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। সাধারণত সরকার প্রতি তিন বছর পরপর একটি রপ্তানি নীতি গ্রহণ করে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে দেশ উত্তীর্ণ হওয়ার পর আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নীতিমালাটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘রপ্তানি নীতিতে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও অগ্রাধিকার পণ্য চিহ্নিতকরণ, রপ্তানি শিল্পের সম্প্রসারণ, শ্রমভিত্তিক রপ্তানি শিল্পের গুরুত্ব, দক্ষ উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে সহজ করা এবং ব্যাপক নীতির অভিযোজনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে দেশের গ্র্যাজুয়েশন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লব, গ্র্যাজুয়েশনের পর ইইউ মার্কেটে তিন বছরের গ্রেস পিরিয়ড এবং অর্থনৈতিক কূটনীতিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।’
বিমসটেক সনদের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শ্রীলঙ্কায় ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য ৫ম বিমসটেক সম্মেলনের আগে এটি স্বাক্ষর করা দরকার এবং সে কারণেই এটি মন্ত্রিসভা বৈঠকে আনা হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সচিবালয় কার্যক্রম প্রদান করবে এবং বিমসটেক সচিবালয় হবে ঢাকায়। তিনি বলেন, বিমসটেক সার্টিফিকেট স্বাক্ষরের পর পণ্য পরিবহনে যোগাযোগের উন্নয়নের পাশাপাশি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একটি মুক্ত-বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলা সম্ভব হবে।