রহমত রহমান: চূড়ান্ত দাবিনামা জারি হয়েছে ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট। এ বছরের আগস্ট শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও ভ্যাট পরিশোধ করেনি শাশা ডেনিমস লিমিটেড। পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়। পরে তা কমে দাঁড়ায় প্রায় দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা। আইন অনুযায়ী, চূড়ান্ত দাবিনামা জারির পর ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কোনো ধরনের ভ্যাট পরিশোধ করেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে আপিল করেছে বলে জানা গেছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিষয়টি প্রসেসিংয়ে রয়েছে। আমরা আপিল করেছি। রায়ে টাকা পেলে আমরা টাকা দিয়ে দেব।’
এনবিআর সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় শাশা ডেনিমস লিমিটেড। সাভারের ডিইপিজেডে (এক্সটেন) অবস্থিত শতভাগ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান শাশা ডেনিমসকে ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করে সাভার কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ। ঢাকা পশ্চিম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন যশোর ভ্যাট বিভাগ চূড়ান্ত দাবিনামা জারির পরও প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট পরিশোধ করেনি।
চূড়ান্ত দাবিনামায় বলা হয়, সাভার ভ্যাট বিভাগীয় দপ্তর শাশা ডেনিমসের সিএ রিপোর্ট যাচাই করে ভ্যাট পশ্চিম কমিশনারেটে ২০১৭ সলের ১৪ নভেম্বর প্রতিবেদন দেয়, যাতে ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১১ কোটি ৪৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫০২ টাকার উৎসে ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী ভ্যাট পশ্চিম কমিশনারেট ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট প্রাথমিক দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জবাব না পাওয়ায় একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিসের তাগিদপত্র ও শুনানিতে আসতে অনুরোধ করা হয়। ১৭ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জবাব দেওয়া হয় এবং দলিলাদি দাখিল করা হয়।
শুনানিতে অংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দাবি করেন, নোটিসে উল্লেখ করা ভ্যাট নির্ণয় সঠিক নয়। পরিশোধিত ভ্যাট বাদ দেওয়া হয়নি। ২০১৫ সালের সিএ রিপোর্টের কনসোলিডেটেড হিসাবের ভিত্তিতে উৎসে ভ্যাট হিসাব করা হয়েছে। কনসোলিডেটেড হিসাবে তাদের গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সেপারেট (আলাদা) করে শাশা ডেনিমসের ভ্যাট হিসাব করতে অনুরোধ জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানের দলিলাদি, বক্তব্য ও সিএ রিপোর্ট যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে কমিশনারেট কমিটি গঠন করে।
অপরদিকে ২০১৮ সালের ১৪ মে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর শাশা ডেনিমস লিমিটেডের বিরুদ্ধে বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন (সিএ রিপোর্ট) যাচাই করে উৎসে ভ্যাট ফাঁকির একটি মামলা করে, যাতে ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয় দুই কোটি ৬৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬৮ টাকা, যা সুদসহ চার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালের ৩০ জুন থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বা কেনাকাটার ক্ষেত্রে এ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। কমিটি দেখতে পায়, যশোর ভ্যাট বিভাগীয় দপ্তরের নিরীক্ষার সময়ের মধ্যেই ভ্যাট গোয়েন্দার নিরীক্ষার সময় বিদ্যমান। ফলে দুটি প্রতিবেদন যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিরেক্টর রেমুনেশন অর্থ কোম্পানির পরিচালকদের সম্মানী বা পারিশ্রমিক, যার বিপরীতে উৎসে ভ্যাট প্রযোজ্য নয়। ফলে ডিরেক্টর রেমুনেশন খাতে দাবি করা ৪৪ লাখ ২১ হাজার ৭৩৯ টাকা ব্যতীত মোট তিন কোটি ৯৪ লাখ ৬৬ হাজার ৬২৭ টাকা আদায়যোগ্য। এছাড়া স্যাম্পল এক্সপেন্সের (নমুনা ব্যয়) ওপর ভ্যাট হবে না। ডিরেক্টর রেমুনেশন ও স্যাম্পল এক্সপেন্স খাত ব্যতীত অন্যান্য খাতে ভ্যাট আদায়যোগ্য বলে কমিটি মত দেয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিল্ডিং অ্যান্ড সিভিল ওয়ার্ক, জেনারেটর, সাবস্টেশন, ইলেকট্রিক, অফিস ইক্যুইপমেন্ট, ফার্নিচার, লোকাল মেশিনারি অ্যান্ড স্টলেশন, কোকারিজ, অফিস ডেকোরেশন, অয়েল ট্যাংকার, ফায়ার রিস্টুগেশার, বেপজা ভাড়া, এন্টারটেইনমেন্ট, ফেব্রিক্স টেস্ট, ফেব্রিক ড্রায়িং, গেস্ট হাউস এক্সপেন্স, বাসাভাড়া, স্টেশনারি, সিকিউরিটি সার্ভিস, স্পেয়ার পার্টসসহ ৬৭টি খাতে প্রযোজ্য উৎসে ভ্যাট দুই কোটি ৭৯ লাখ ৪২ হাজার ৯৬২ টাকা।
অর্থাৎ ভ্যাট পরিহার বা ফাঁকির বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে চূড়ান্ত দাবিনামায় উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে বলা হয়, পরিহার করা ভ্যাটের ওপর আইন অনুযায়ী ফাঁকি দেওয়ার সময় থেকে পরিশোধ করার সময় পর্যন্ত দুই শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য হবে। সুদসহ হিসাব করলে এ ফাঁকির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট পরিশোধে ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হয়। দাবিনামা জারির সাত দিনের মধ্যে ভ্যাট পরিশোধ করতে বলা হয়।
ভ্যাট পশ্চিমের একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, চূড়ান্ত দাবিনামা জারির এক বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। আইন অনুযায়ী তাগিদপত্র দেওয়ার পর ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কথা। সুযোগ দেওয়ার পরও প্রতিষ্ঠান ভ্যাট পরিশোধ করেনি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা আপিল করেছে।