Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:20 pm

১৫ কাঠায় দেড় লাখ টাকার পেঁপে বিক্রির আশা চাষি রওনাফের

মেহেদী হাসান, রাজশাহী: ফলের রং লাল-সবুজ। একেকটি ফলের ওজন দেড় থেকে দুই কেজি। পেঁপে পুরু, গাঢ় লাল, স্বাদেও বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত। অধিক ফলনসম্পন্ন এই পেঁপে কোনো হাইব্রিড জাতের নয়, দেশি জাত। রেড লেডি জাতের মতোই ফলন হওয়ায় মাত্র ১৫ কাঠায় দেড় লাখ টাকার পেঁপে বিক্রির আশা করছেন পেঁপেচাষি রওনাফ জাহান (৬৫)। রাজশাহী পবা উপজেলার পারিলার মোসলেমের মোড় এলাকার চাষি রওনাফ জাহান। ২ বিঘা জমিতে গত বছর কলা চাষ করেছিলেন। এবার দেশি জাতের পেঁপে চাষ করেছেন। গাছে ফুল আসতে শুরু হয়েছে। আশা করছেন প্রতি মণ পেঁপে ৪৫০-৫০০ টাকা দরে রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।

রওনাফ জাহানের মতো পবা উপজেলার এলাকার অর্ধশতাধিক কৃষক রেড লেডি, দেশি, হাইব্রিড জাতের পেঁপে চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। এসব কৃষক এর আগে জমিতে কলা, আলু বিভিন্ন সবজি চাষ করতেন। কিন্তু রেড লেডি পেঁপে থেকে একটানা দুই বছর ফলন পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে লাভের দিক থেকে আলুর কয়েকগুণ। তাই রেড লেডি পেঁপে চাষে ঝুঁকছেন। আবার দেশি জাতের কিছু পেঁপে ধরে বেশি। স্বাদ ও গন্ধ ভালো হওয়ায় বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে পেঁপের। দেশি জাতের মধ্যে পরীক্ষিত কিছু জাত চাষির কাছে থেকে সংগ্রহ করে তারা চাষ করছেন। এতে কৃষি বিভাগের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ছে না।

পেঁপে চাষি রওনাফ জাহান বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর ভগ্নিপতির (ভাইরা) কাছ থেকে চারা নিয়েছি। গত বছর সে এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো পেঁপে বিক্রি করেছে। আমি ভাবলাম কলা রেখে লাভ নাই। তাই তার কাছ থেকে প্রতি প্যাকেট (দুটি-তিনটি করে গাছ) ১০ টাকা করে কিনে নিলাম। জাত নিয়ে চিন্তা নাই। কারণ, তার বাগানে আমি গিয়েছি আর সব চোখের সামনেই হয়েছে।’

জমি ও জাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা কোনো হাইব্রিড জাত নয়, এটা দেশি জাত। আমার পুকুরের পাড়ে ৩টি গাছ পরীক্ষামূলক লাগিয়েছিলাম। বাড়িতে খাওয়ার পর প্রায় ২ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছি। পেঁপের সাইজও বড়। দুই-আড়াই কেজি ওজন হয়। স্বাদ দেশির মতো। বাজারে বেশ চাহিদা আছে। আমি পুকুরের তলের মাটি দিয়ে পাড় বেঁধেছি। আর তোলা মাটি হওয়ার কারণে জোর বেশি। রোগবালাই তেমন নাই বললেই চলে। আমি এবার চারা রেখে দিব সামনের বছরের জন্য।’

জেলা কৃষি সূত্রে জানা যায়, চৈত্র মাসের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে চারা রোপণ করতে হয়। ২৪-২৫ মাস পর্যন্ত একটানা ফলন পাওয়া যায়। এ জাতের পেঁপে পুরু, গাঢ় লাল, স্বাদেও বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত। গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সেন্টিমিটার হলে ফল ধরা শুরু হয়। প্রতিটি গাছে ৪০টির বেশি ফল হয়। পাকা অবস্থায়ও দূর-দূরান্তে বাজারজাত করা যায়। রোগ সহ্য করারও ক্ষমতা দেশি জাতের পেঁপের অনেকটাই বেশি।

রাজশাহীর সিলিন্দা এলাকার এক পেঁপে চাষি বলেন, ‘গত বছরের শুরুর দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চারা নিয়ে আসি। গাছের বয়স ৭-৮ মাস হলে ফল আসতে শুরু করে। এখন আমার দুই বিঘা জমিতে পেঁপে আছে। পেঁপে হলে গড়ে ৫০০ টাকা মণ বিক্রি হয়।’

তিরি আরও বলেন, ‘প্রতিবার ফল ভাঙ্গার পর ডিএপি, ইউরিয়া, পটাশ, সালফার দিতে হয়। বৃষ্টি না হলে সেচ দিতে হয় ১৫-২০ দিন পরপর। বিঘাতে এখন অনেক লাভ করতে পারছি।’

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পেঁপে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩৫৪ হেক্টর। এসব জমি থেকে প্রায় উৎপাদন হয়েছিল ৪৪ হাজার ২৮৭ মেট্রিক টন পেঁপে। চলতি অর্থবছরে জেলায় মোট ১ হাজার ৮০১ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বোয়ালিয়া থানায় ২৪ হেক্টর, মতিহারে ১৫ হেক্টর, পবা উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর, তানোরে ১২ হেক্টর, মোহনপুরে ৫০ হেক্টর, বাগমারায় ২৪০ হেক্টর, দুর্গাপুরে ৫৫০ হেক্টর, পুঠিয়ায় ১০০ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে ৬০ হেক্টর, চারঘাটে ৮০ হেক্টর ও বাঘা উপজেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ করা হয়েছে।

সামনের বছর আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বছর সবজির দাম বেশি। তাই চাষিদের আগ্রহ বেশি। রেড লেডি কিংবা দেশি জাতের পেঁপে খুব মিষ্টি এবং পুষ্টিগুণও ভালো। স্বল্প সময়ে ফল পাওয়া যায়। যারা এ পেঁপের চাষ করছেন তাদের প্রত্যেককে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।