নিজস্ব প্রতিবেদক: চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়নসহ ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ৪১০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২২ হাজার ৭৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৮৪ কোটি ৬৪ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে তিন হাজার ৯৪৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা জোগান দেওয়া হবে। তবে প্রাথমিকভাবে কার্যতালিকায় থাকলেও একনেকে অনুমোদন পায়নি জাতীয় রাজস্ব ভবন নির্মাণ প্রকল্পের সংশোধনের প্রস্তাবটি।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলমসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
গতকাল একনেকের বিবেচনার জন্য ১৬টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ১৫টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য একনেক থেকে অনুশাসন দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ৩০ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করলে বিমান চলাচলে কোনো সমস্যা হবে কি না সে বিষয়ে বেবিচকের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে ২০ তলা করার কথা থাকলেও পরে এটি ৩০ তলা করার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সে অনুযায়ী রাজস্ব ভবনের ভিত্তি প্রস্তুত করা হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এসডিজির চতুর্থ অভীষ্ট মানসম্মত শিক্ষার লক্ষ্য পূরণে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কেননা, ভিত্তি মজবুত হলে ভবিষ্যৎ ভালো হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট হবে। এসব টয়লেট পুরুষ এবং নারী শিক্ষকরাও ব্যবহার করবেন। এতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অভ্যাস গড়ে উঠবে।
চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ১২৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং চাহিদাভিত্তিক নতুন জাতীয়করণ করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৪০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ৩৮৩ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে সদর দফতর ও জেলা কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষা কৌশল অধিদফতর শক্তিশালীকরণ প্রকল্প। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়ের পরিমাণ ৩৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৬ কোটি টাকা। রাজশাহী হাইটেক পার্ক স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২৩৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে ৬০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। চিটাগং সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প, এর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে দুই হাজার ৪২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ৩৭ জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পে (২য় সংশোধিত) ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮৯৯ কোটি টাকা।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যানের বহিঃসীমানা দিয়ে লোপরোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২০ কোটি চার লাখ টাকা। সিলেট সিটি করপোরেশনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রধান ১১টি ছড়ার পাশে আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এছাড়া মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগের অধীন ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো স্থায়ী কংক্রিট সেতু দ্বারা প্রতিস্থাপন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের উদ্ধৃতি দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, বেইলি ব্রিজ আর থাকবে না। এগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের যেসব জায়গায় বেইলি ব্রিজ রয়েছে, সেগুলো স্থায়ী কংক্রিটের সেতু দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হবে।
গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯৪১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৯৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্ব^াইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে তিন হাজার ২৫৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
Add Comment