প্রতিনিধি, গাংনী (মেহেরপুর):মেহেরপুরের গাংনীর পোড়াপাড়া গ্রামে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দিয়ে ১৫ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা কয়েক ব্যক্তি। ফেয়ার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির পরিচয় দেন তারা। ঋণ নিতে এসে অফিসে কোনো লোকজন না পেয়ে ভুক্তভোগীরা মেহেরপুর সদর ও গাংনী থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ বলছে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, ফেয়ার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির পরিচয় দিয়ে গাড়াডোব পোড়াপাড়া গ্রামের কথিত কবিরাজ শাবানা ওরফে পানসির বাড়ি ভাড়া নেয়ার কথা বলে আস্তানা গাড়েন চার ব্যক্তি। বাড়িভাড়ার চুক্তিনামা করার আলোচনার মধ্য দিয়ে কেটে যায় কয়েক দিন। শনিবার (১৫ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে অফিস উদ্বোধন ও ঋণ বিতরণের কথা বলে কবিরাজ শাবানা ওরফে পানসির একটি বাড়ির সামনে তৈরি করা হয় গেট। অফিসে রাখা হয় ডেকোরেশন থেকে আনা কয়েকটি টেবিল। তার ওপরে রাখা হয় কয়েকটি খালি ফাইল, রেজিস্টার ও ফাইল বক্স।
এই ফাঁকে তারা গাড়াডোব, আলমপুর, শ্যামপুর ও সাহারবাটিসহ বিভিন্ন গ্রামে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে থাকেন। এক লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে সঞ্চয় জমা করতে হবে ১২ হাজার টাকা। এমন শর্তে ওই গ্রামগুলোর অসংখ্য মানুষ অজানা-অচেনা মানুষগুলোর হাতে তুলে দেন টাকা। এলাকার মানুষের মৌখিক হিসেবে এ টাকার পরিমাণ ১৫ লক্ষাধিক বলে জানা গেছে।
টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদে পড়েছেন বলে উল্লেখ করে গাড়ডোব গ্রামের জলিবিল পাড়ার আলমগীর হোসেন বলেন, বুধবার (১২ জুলাই) আমাদের পাড়ায় এক ব্যক্তি গিয়ে ওই সমবায় সমিতির পরিচয় দিয়ে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেয়। পানসি কবিরাজের বাড়িতে ১০ লাখ টাকা সিকিউরিটি দিয়ে তারা অফিস নিয়েছেন বলে জানান আমাদের। ঋণ পাওয়ার জন্য আমরা লাখপ্রতি সাড়ে ১১ হাজার টাকা করে টাকা দিই। একই অভিযোগ করে আরেক ভুক্তভোগী সবজি ব্যবসায়ী বকুল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে সমিতির লোকের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে শুক্রবার সকালে পানসি কবিরাজের বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি একটি গেট তৈরি করা হয়েছে। তবে অফিসের কাউকে পাওয়া যায়নি।
পরিচয় নিশ্চিত না করে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কীভাবে ঘর ভাড়া দিলেন, তা জানতে চাইলে পানসি কবিরাজ বলেন, চারজন লোক বুধবার (১২ জুলাই) আমার বাড়িতে এসে ঘর ভাড়া নেয়ার আলোচনা করেন। কাগজপত্র এবং তাদের ছবিসহ ঘরভাড়া চুক্তিনামা করতে বললে তারা শনিবার (১৫ জুলাই) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সব সম্পন্ন করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার তারা আমার ঘরে ডেকোরেশন থেকে চেয়ার-টেবিল নিয়ে এসে ঘরে রাখে। ডেকোরেশনের লোকজন বাড়ির প্রবেশমুখে গেট করে দেয়। এর পর থেকে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে ভুক্তভোগীরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেও ওই সমবায় সমিতির কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া ব্যক্তিদের হদিস পাচ্ছেন না। পরে শনিবার আলমপুরের এক ভুক্তভোগী মেহেরপুর সদর থানায় এবং গাড়াডোব গ্রামের এক ভুক্তভোগী গাংনী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।