Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:39 pm

১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্তের শঙ্কা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানকে গতিশীল করার জন্য একে একে গড়ে তোলা হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল; যা ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। যদিও শুরুতে জমি বরাদ্দ নেয়ার সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধের বিষয় ছিল না। হঠাৎ করে জমি বরাদ্দ নেয়ার ক্ষেত্রে নিবন্ধন মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। অথচ শিল্প অঞ্চলের বাইরে যে কেউ সহজে জায়গা কিনতে পারে। আর জমি নিবন্ধনে ভ্যাট পরিশোধ করতে হয় না। এ কারণে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ কমবে বলে ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন।

গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড) ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট-২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনার প্রভাবে গত বছর বিশ্বব্যাপী বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৩৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। এক দশকেরও বেশি সময় পরে এ প্রবাহ এক ট্রিলিয়ন (লাখ কোটি) ডলারের নিচে নেমে গেছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। গত ২০২০ সালের এফডিআই এসেছে দুই দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে এর পরিমাণ ছিল দুই দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৯ সালে রেকর্ড ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ এফডিআই প্রবাহ কমেছিল। এর আগে ২০১৭ সালে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল দুই দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, ২০১৬ সালে দুই দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার ও ২০১৫ সালে দুই দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় ২০২০ সালে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে শীর্ষে থাকা ভারতে গত বছর বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ ছিল ৬৪ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলার। এ সময় দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে দুই দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার এফডিআই যায় গত বছর। দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলো এক বিলিয়ন ডলার করেও এফডিআই পায়নি।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকার বিনিয়োগ আর্কষণে ১০০টির মতো অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। এর জন্য সেবা সহজীকারণ, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে কাজ করছে। গত কয়েক বছরের দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে। তবে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণে বরাবরই বাংলাদেশ খুব একটা সাফল্য দেখাতে পারেনি, যদিও ২০১৮ সালে হঠাৎ এ খাতে বড় ধরনের উত্থান হয়। সে বছর বাংলাদেশে এফডিআই প্রবাহ বাড়ে প্রায় ৬৮ শতাংশ। এতে প্রথমবারের মতো সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায় এফডিআই প্রবাহ। তবে সে ধারা স্থায়ী হয়নি। এরপর টানা দুই বছর ধরে কমছে বিদেশি বিনিয়োগ। আর চলমান করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে না এলে বিদেশি বিনিয়োগ তেমন আসবে। কারণ বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগ তেমন বৃদ্ধি পায়নি। যদিও সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অনেক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আইনগত ও নীতিগত সহযোগিতা দরকার। এক্ষেত্রে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অধীন ভূমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে নিবন্ধন ফির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা করেছে, যা পুরোপুরি অযৌক্তিক।