জাকারিয়া পলাশ: ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় কয়েক শ পিভিসি পাইপ তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় দেশি মেশিনারিজ দ্বারা পিভিসি পাইপ উৎপাদন হয়। এসব পণ্যের ওপর গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে বাধ্যতামূলক ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু এ খাতের ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই ওই হারে ভ্যাট দিচ্ছেন না। এ অবস্থায় নতুন অর্থবছরের জন্য আগের মতো তিন শতাংশ হারে প্যাকেজ ভ্যাট পুনর্বহালের দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা।
এ বিষয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে ‘বাংলাদেশ পিভিসি পাইপ প্রস্তুতকারক সমিতি’। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশুদ্ধ পানি উত্তোলন ও কৃষিকাজ এবং স্যানিটেশন কাজে পিভিসি পাইপ ব্যবহƒত হয়। দেশের ৯০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও কৃষকরা এ পাইপ ব্যবহার করে। পুরান ঢাকাসহ ঢাকা ও চট্টগ্রামের কারখানাগুলো মূলত পুনর্ব্যাবহারভিত্তিক (রিসাইকেল) শিল্প। কৃষক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যবহার্য হওয়ায় এ পণ্যের ওপর ভ্যাট হ্রাসের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
এ প্রসঙ্গে সমিতির সভাপতি মো. আবুল খায়ের শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আগে আমরা বার্ষিক মোট টার্নওভারের ওপর তিন শতাংশ হারে প্যাকেজ ভ্যাট দিয়ে আসছিলাম। গত বছর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। তবে তাতে সরকারের খুব একটা লাভ হয়নি বলেই মনে হয়। অধিকাংশ অর্থ ফিল্ড অফিসারদের পকেটে গিয়েছে। সরকারের ফান্ডে তেমন একটা জমা হয়নি। কারণ আমরা ১৫ শতাংশ ভ্যাট অনুসরণ করিনি। আমরা আবার আগে ব্যবস্থায় ভ্যাট চালুর জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি।’
এ উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প এখন বেশিরভাগ শহরাঞ্চলেই গড়ে ওঠে। ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর ভ্যাট আরোপ করায় এ শিল্পের কেউ রেহাই পাচ্ছে না।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া লিখিত প্রস্তাবে জানা যায়, তারা ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পরিবর্তে আগের মতো তিন শতাংশ প্যাকেট ভ্যাট পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে টার্নওভারের সীমা এক কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। প্যাকেজ ভ্যাট না করা হলে কারখানাগুলোকে আধা শতংশ (শূন্য দশমিক পাঁচ) হারে ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সূত্রমতে, ১৯৯১-৯৫ সময়কালে দেশি মেশিনারিজ দ্বারা তৈরি পিভিসি পাইপের কারখানাগুলোকে কুটিরশিল্পের আওতায় আনা হয়েছিল। ফলে এ শিল্প বেশ বিস্তৃতি লাভ করে। পরে এ শিল্পকে কুটিরশিল্পের সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়। ফলে এটি ঝিমিয়ে পড়ে অনেকটা। তারপরও ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী এ শিল্পের ওপর ট্রাঙ্কেটেড ভ্যাট বা প্যাকেজ ভ্যাট চালু ছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত এ খাতের উদ্যোক্তারা তাদের বার্ষিক টার্নওভার করের ওপর তিন শতাংশ ভ্যাট দিয়ে আসছিল। গত অর্থবছরেই (২০১৬-১৭) ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটির অভ্যন্তরীণ কারখানাগুলোর পণ্যের ওপর প্যাকেজ ভ্যাট বাতিল করে ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্যাকেজ ভ্যাট থাকাকালে একেকটি কারখানা থেকে তাদের বার্ষিক টার্নওভারের বিপরীতে ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট প্রদান করত। কিন্তু এবার ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের পর থেকে ভ্যাট প্রদানের হার আরও কমে গেছে। অধিকাংশ কারখানার উদ্যোক্তারা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে।