Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 6:10 pm

১৫ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খালি থাকছে আসন

 

আবদুল হাকিম আবির: প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী লাখ লাখ শিক্ষার্থী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। পর্যাপ্ত আসন না থাকায় অনেকেই বঞ্চিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থেকে। কিন্তু নানা জটিলতায় সীমিত আসনগুলোর মাঝেও খালি থেকে যাচ্ছে কিছু আসন। গত ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে দেশের অন্তত ১৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট আসনের কম সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ বার্ষিক বিবরণীতে এই তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিন্ন পরীক্ষা নীতি অনুসরণ না করা এর মূল কারণ। এ ছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের চাহিদা না থাকা কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণের কারণে এই আসনগুলো খালি থাকছে।

সূত্রমতে, গত বছর সবচেয়ে বেশি আসন শূন্য ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৫ হাজার ৭৬০টির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪৫৪টি আসনই শূন্য ছিল গত বছর, যা মোট আসনের প্রায় আট শতাংশ। শূন্য আসনের দিক থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে যথাক্রমে ১৭৭ ও ১৭৩টি আসন শূন্য ছিল। এ ছাড়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ১৭১টি ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ১০২টি  শূন্য ছিল গত বছর।

সবচেয়ে বেশি আসন খালি থাকা প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা সব সময়ই আসনগুলো পূর্ণ করার জন্য সচেষ্ট থাকি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা আরও ভালো বিষয় বা সুযোগ গ্রহণ করার জন্য ভর্তি বাতিল করে। পরবর্তী সময়ে আর সে আসনগুলো পূরণ করা সম্ভব হয় না। তবে ভর্তি পদ্ধতিতে সংস্কার করে একবার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার নিয়ম করাতে এভাবে আসন খালি থাকাটা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ৯৩টি, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০টি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৯টি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬টি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ ১৬টি, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪টি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ১২টি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) ১০টি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি আসন খালি রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এভাবে আসন খালি থাকাটা শিক্ষাব্যবস্থা এবং ভর্তিপদ্ধতির ত্রুটি তুলে ধরে। এই সমস্যার সমাধান এখনই সম্ভব নয়। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন করতে হবে। যত দ্রুত মানোন্নয়ন করা যাবে তত দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।

আসন শূন্য থাকা রোধ করতে ইতোমধ্যেই কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তিপদ্ধতিতে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ একবারে নামিয়ে এনেছে। যেখানে পূর্বে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারতো। আসন শূন্য থাকার বিষয়টি ক্রমাগত চলে এলেও এ পদক্ষেপে তা কিছুটা হলেও কমেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে সব বিষয় অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং চাকরির বাজারে যে বিষয়গুলোর চাহিদা কম সে বিভাগগুলোতেই আসন খালি থাকছে বেশি। এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পেয়েও ভর্তি না হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এ ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পর হতাশ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সমস্যার সমাধান করতে হলে উচ্চশিক্ষার বাজার চাহিদা, শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবং দেশীয় চাকরির বাজারসহ সামগ্রিক বিষয় চিন্তা করে বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

সমস্যাটিকে সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকি উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, যেখানে মাত্র একটি আসনের জন্য শতাধিক শিক্ষার্থীও ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সেখানে এভাবে আসন খালি থাকাটা অমানবিক।

সমস্যার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ভর্তি পদ্ধতির সংস্কারে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতা অনেক সময় পাওয়া যায় না। এর কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের লাভকে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির চেয়ে বড় করে দেখে। আর এ আসন শূন্যতা রোধে বিভিন্ন সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তার শতভাগ সমাধান করা যায়নি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যথাযথ আন্তরিকতার অভাব রয়ে গেছে। তবে আশার বিষয় হচ্ছে, কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে এক্ষেত্রে আগের মতো অধিক সংখ্যক আসন এখন আর খালি থাকছে না।