মেহরান হোসেন চৌধুরী নিউইয়র্কের ক্লার্কসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্সে স্নাতক। ব্যাংকার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। বর্তমানে বিডিরেটস নামে একটি ফাইন্যান্সিয়াল কম্পারিজন ও সাপোর্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একটি কমন প্ল্যাটফরমে এনে গ্রাহকসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ব্যবসার নানা দিক নিয়ে শেয়ার বিজের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর
শেয়ার বিজ: আপনার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও সেবা সম্পর্কে বলুন…
মেহরান হোসেন চৌধুরী: দেশে ৬৫টি ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিডিরেটস এসব প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রম, ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা ও মাধ্যম সম্পর্কে গ্রাহককে ধারণা দিয়ে থাকে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একজন গ্রাহক সহজে নানা ব্যাংকের ঋণ ও সুদের তুলনা করে একটি স্বচ্ছ ধারণা পেতে পারেন। তারা ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঋণপ্রাপ্তি সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। এরপর তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু মৌলিক তথ্য দিয়ে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আমাদের দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম এখনও ম্যানুয়াল। ফলে ব্যাংকের সেবাসংক্রান্ত তথ্যের জন্য গ্রাহককে ব্যাংকে যেতে হয়। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোকেও প্রচুর লোকবল রাখতে হচ্ছে। ফলে ধীরগতির হয়ে যায় প্রক্রিয়াটি। এ কারণে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা অনলাইনভিত্তিক একটি ব্যাংকিংসেবা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছি। এ ধরনের সুবিধা উন্নত বিশ্বের গ্রাহক পাচ্ছেন। বাংলাদেশে আমরাই প্রথম এ ব্যবস্থা এনেছি।
শেয়ার বিজ: আপনারা কয়টি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছেন?
মেহরান হোসেন: আমরা ইতোমধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ইবিএল ও সিটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছি। আশা করছি, আগামী এক বছরের মধ্যে আরও ১৫ থেকে ২০টি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবো। এভাবে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এ প্ল্যাটফর্মে আনতে পারবো বলে আশা করি।
শেয়ার বিজ: বিডিরেটস-এর মূল গ্রাহক কারা? গ্রাহক হওয়ার যোগ্যতা কী?
মেহরান হোসেন: ব্যাংকঋণ সম্পর্কে আমাদের দেশে অনেকের কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। যেমন, মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় করে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার কথা অনেক গ্রাহক ভাবতে পারে না। তবে এ আয়েও ঋণ পাওয়া সম্ভব। আমরা গ্রাহককে তার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যাংকঋণ নেওয়ার পথ দেখাচ্ছি। আমাদের প্রাথমিক গ্রাহক হতে হলে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হতে হবে। তার একটা চাকরি বা ব্যবসা থাকতে হবে। মাসিক আয় ন্যূনতম ১৫ হাজার টাকার পাশাপাশি এক বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। বয়স অন্তত ২২ বছর হতে হবে।
শেয়ার বিজ: আপনাদের প্রতিষ্ঠান ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহককে কীভাবে সহায়তা করে থাকে?
মেহরান হোসেন: ধরুন, কোনো গ্রাহক ফোন দিয়ে বললেন, তার একটা ক্রেডিট কার্ড কিংবা ব্যাংকঋণ দরকার। এ ক্ষেত্রে আমরা গ্রাহককে সব ব্যাংকসেবার সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জানাই। ফলে গ্রাহক নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তিনি ব্যাংকে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সরাসরি কিংবা আমাদের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। তথ্য যাচাইয়ের দায়িত্ব আমরা নিই না। তথ্য যাচাই ও অন্যান্য প্রক্রিয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মাবলি মেনে ব্যাংকগুলো সংগ্রহ করে থাকে।
শেয়ার বিজ: আইটি খাতের উন্নয়নে সরকারের যে নীতিমালা আছে, তা কি যথেষ্ট? এ খাতের উন্নয়নে মূল প্রতিবন্ধকতাগুলো কী?
মেহরান হোসেন: এখন পর্যন্ত যে নীতিমালা আছে, তা যথেষ্ট। আইটি খাতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে বর্তমান সরকার। তবে কিছু সমস্যা তো আছেই। যেমন অনেক জায়গায় যোগ্য লোক নেই। আইটি খাতে অনেক সময় উপদেষ্টা কিংবা পরিচালক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আইটি প্রোডাক্ট আর কিউসি সম্পর্কে বোঝেন। কিন্তু প্রোডাক্টের বিজনেস পলিসি কেমন তা নাও বুঝতে পারেন। এ জায়গায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমার মনে হয়, দেশের বাইরে যেসব বাংলাদেশি আইটি ও সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করছেন, তাদের দেশে এনে আইটি পলিসি মেকার হিসেবে বসানো হলে এ খাতে বড় পরিবর্তন আসবে।
শেয়ার বিজ: দেশে প্রতিবছর যে হারে আইটি গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে, সে তুলনায় আইটি এক্সপার্টের সংখ্যা কম। এর কারণ কী?
মেহরান হোসেন: দেশে আইটি এক্সপার্ট কম থাকার পেছনে অন্যতম বড় কারণ সুযোগের অভাব। একজন আইটি গ্র্যাজুয়েটকে চাকরির শুরুতে ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা অফার করা হচ্ছে। ফলে তিনি যে স্বপ্ন নিয়ে পড়ালেখা করেছিলেন, সে স্বপ্ন নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন না। এ কারণে দ্রুত হারিয়ে যায় উদ্যমটা। আমরা আইটি গ্র্যাজুয়েটকে প্রাপ্য সম্মানী দিতে পারছি না। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর অনেক যোগ্য ব্যক্তি দেশের বাইরে চলে যান। আমি মনে করি, আইটি এক্সপার্টদের ধরে রাখার জন্য তাদের প্রাপ্যটুকু প্রদান করা উচিত।