১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকার ১২ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদ সদস্যদের সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ করবে সরকার। এজন্য ‘পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সেইসঙ্গে আরও ১১টিসহ মেট ১২টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে চার হাজার ৬৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভার্চুয়ালি গণভবন থেকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। এ সময় পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ, কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য শরিফা বেগমসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পটির  ব্যয় ধরা হয়েছে হয়েছে চার হাজার ৫০ কোটি টাকা। চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এট বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এমপিদের সুপারিশ অনুযায়ী এসব সেতু নির্মাণ করা হবে। আমার এলাকায়ও আমি একটি সেতু পেয়েছি। সাধারণ মানুষ অনুরোধ নিয়ে আসেন। তাদের প্রয়েজনের কথা চিন্তা করে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। তবে কোনো এমপির অ্যাকাউন্টেই টাকা যাবে না। এসব বাস্তবায়ন করবে এলজিইডি।’

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশকে আলোকিত করায় প্রধানমন্ত্রীকে একনেকের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে কভিড-১৯ মোকাবিলা এবং বাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে এক কোটি মানুষকে সহায়তা করার জন্যও তাকে অভিনন্দন জানানো হয়। মন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। তবে এ বৃদ্ধির পেছনে আন্তর্জাতিকতা জড়িত। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। তিনি জানান, রেমিট্যান্সের অবস্থা কয়েক দিন আগে কিছুটা খারাপ থাকলেও এখন ভালো হয়েছে। অর্থনীতির অন্যান্য সূচক ভালো অবস্থানে আছে। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সঠিক সময়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত এবং সঠিক ব্যবস্থা নেয়ার কারণেই।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, মূল্যস্ফীতি বোঝাতে এখন টিসিবির ট্রাকের পেছনের মিছিলটা পত্রিকায় বড় করে দেখানো হয়। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি-সমর্থিত কিছু পত্রিকা গোপনে বা প্রকাশ্যে নতুন করে বাসন্তী খোঁজার চেষ্টা করছে। এখন একটা প্রবণতা হলো ট্রাকের পেছনে মিছিলটা বড় করে দেখানো হয়। এখন অনেক পত্রিকায় বা নেতৃস্থানীয় পত্রিকায় এসব দেখি। দু-একটা বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকায়ও দেখি এসব চিত্র। ছবি দিয়েছে যে, মানুষ রাস্তায় শুয়ে আছে। কিন্তু ড্রেসটা দেখা যাচ্ছে সুন্দর শাড়ি। আমি যেটা বলতে চাই, একটা প্রচেষ্টা চলছে রাজনৈতিকভাবে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি-সমর্থিত কিছু পত্রিকা গোপন বা প্রকাশ্যে নতুন করে বাসন্তী খোঁজার চেষ্টা করছে। (১৯৭৪ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী থানার বাসন্তী নামের এক মহিলা বন্যার সময় ভেলায় চড়ে জাল পরা অবস্থায় কলাগাছের ডাঁটা রান্নার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। এমন ছবি দেশের একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ পায়, যেটি নিয়ে তখন সারাবিশ্বে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল)।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে ড. আলম বলেন, এখন কভিড সারাবিশ্বের সমস্যা। সারাবিশ্বেই একই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। রাশিয়ার যুদ্ধের আগেও মূল্য কম ছিল। আমাদের হতাশাগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ নেই। মূল্যস্ফীতি শুধু আমাদের দেশে হচ্ছে না, এটা সারাবিশ্বের চিত্র। আমাদের দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো। চৈত্র মাসেও দেশের বাজারে পর্যাপ্ত শাকসবজি পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের মূল্যস্ফীতির মূল কারণ আমদানি করা পণ্য। তিনি জানান, শ্রীলঙ্কায় এখন মূল্যস্ফীতির হার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া  পাকিস্তানে চলছে ১২ দশমিক ২ শতাংশ,  ব্রাজিলে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ, ভেনেজুয়েলায় ৩৪০ শতাংশ, আর্জেন্টিনায় ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ, তুরস্কে ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ আর বাংলাদেশে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। আমরা সুন্দরভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করছি। একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলোÑবাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০টি ব্রডগেজ (বিজি) প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ প্রকল্প। এটির ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭০৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। লোকাল গভর্নমেন্ট কভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রকল্পে ব্যয় হবে দুই হাজার ৫৫৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। উপকূলীয় জেলাগুলোয় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯৬১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। চট্টগ্রামে বিএএফ ঘাঁটি জহুরুল হক শীর্ষক বিমানসেনা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনে ব্যয় ১৪০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। দ্য প্রজেক্ট ফর ইমপ্রুভমেন্ট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ফ্যাসিলিটিসে ব্যয় হবে ২২৮ কোটি আট লাখ টাকা। নওগাঁ সড়ক বিভাগাধীন তিনটি আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং তিনটি জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণে ব্যয় হবে এক হাজার ১৮২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এক্সটারনাল টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনে ব্যয় ৩৭৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বীজ বর্ধন খামার স্থাপনে ব্যয় ৪৩৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ভূগর্ভস্থ সেচনালা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সেচ এলাকা ও সেচ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পরীক্ষামূলকভাবে ড্রিপ সেচ পদ্ধতির প্রচলনে ব্যয় ৩২৯ কোটি টাকা। সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২ বাস্তবায়নে ব্যয় এক হাজার ৮২ কোটি টাকা। বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৬৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০