নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) সরকারের অনুকূলে ১৬৬ কোটি টাকার বিপরীতে এক কোটি ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ৩৭টি শেয়ার ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশনের জন্য দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্ল সিস্টেম (এসএমডব্লিউ-৫) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত ‘রিজিওনাল সাবমেরিন টেলিকমিউনিকেশনস প্রজেক্ট, বাংলাদেশ’ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি লিমিটেড সরকারের কাছ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তিন কিস্তিতে ১৪০ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তিন কিস্তিতে ২৬ কোটি টাকাসহ ছয় কিস্তিতে সর্বমোট ১৬৬ কোটি গ্রহণ করেছে।
যেহেতু কোম্পানিটি সরকারের কাছ থেকে অর্থ পেয়েছে, তাই বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সেই অর্থ আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেয়ারে রূপান্তরিত করে পরিশোধিত মূলধনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেই মোতাবেক কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ অক্ষুণœ রেখে বাজারদরে সরকারের অনুকূলে শেয়ার ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও সেটি কোম্পানিটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, শেয়ারহোল্ডার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনের পর এই শেয়ার ইস্যু করতে পারবে।
গত বছর সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানির শেয়ারের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করার জন্য ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ইস্যু ম্যানেজারের পরামর্শ, এতদ্বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি সভাসমূহের সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা, ভবিষ্যতে প্রদেয় লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা রক্ষাসহ সার্বিক বিবেচনায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রাপ্ত ১৪০ কোটির বিপরীতে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের শেষকার্যদিবসের বাজারমূল্য বিবেচনায় ১১০ টাকা ২০ পয়সা করে এক কোটি ২৭ লাখ চার হাজার ১৭৪টি এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রাপ্ত বাকি ২৬ কোটি টাকার বিপরীতে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের শেষ কার্যদিবসের বাজার মূল্য বিবেচনায় ১২০ টাকা ১০ পয়সা করে ২১ লাখ ৬৮ হাজার ৮৬৩টিসহ ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সর্বমোট এক কোটি ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ৩৭টি শেয়ার ইস্যু করা হবে।
এদিকে গতকাল ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ১৬ টাকা ৮০ পয়সা বেড়ে প্রতিটি সর্বশেষ ২০৭ টাকা ৩০ পয়সায় হাতবদল হয়, যার সমাপনী দর ছিল ২০৭ টাকা ৩০ পয়সা। দিনজুড়ে ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ২১০ শেয়ার মোট তিন হাজার ৫৪১ বার হাতবদল হয়, যার বাজারদর ৩১ কোটি ৬৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। দিনজুড়ে শেয়ারদর সর্বনি¤œ ১৯৪ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০৯ টাকা ২০ পয়সায় হাতবদল হয়। গত এক বছরে শেয়ারদর ১৪৬ টাকা থেকে ২৩৬ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে।
কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ৩০ জুন, ২০২১ সমাপ্ত হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১১ টাকা ৫৭ পয়সা। ৩০ জুন, ২০২১ শেয়ারপ্রতি নেট সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ৫২ টাকা ৪৯ পয়সা। এছাড়া এই হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। এর আগে ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য কোম্পানিটি ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ওই সময় ইপিএস হয়েছে পাঁচ টাকা ৮০ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি এনএভি ছিল ৪০ টাকা ৯৩ পয়সা।
চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০২১) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে তিন টাকা ২১ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল দুই টাকা এক পয়সা। ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শেয়ারপ্রতি নেট সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ৫৫ টাকা ৭১ পয়সা। আর প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ছয় টাকা ২২ পয়সা।
কোম্পানিটি ২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে লেনদেন হচ্ছে। এক হাজার কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ১৬৪ কোটি ৯০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ৬২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট ১৬ কোটি ৪৯ লাখ পাঁচ হাজার ৫১০ শেয়ার রয়েছে। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যমতে, মোট শেয়ারের মধ্যে সরকারি ৭৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক ১৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ, বিদেশি দুই দশমিক ৭৪ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে আট দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজারদরের ভিত্তিতে শেয়ারের মূল্য আয় (পিই) অনুপাত ১৭ দশমিক ৯২ এবং হালনাগাদ অনিরীক্ষিত ইপিএসের ভিত্তিতে ১৬ দশমিক ১৪।