ইসমাইল আলী: খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় ২০১৫ সালের অক্টোবরে। এর আগে ওই বছর মে মাসে প্রকল্পটি এক দফা সংশোধন করা হয়। তবে নির্মাণ শুরুর পর মূল রেলপথ ছাড়াও রূপসা রেল সেতুর নকশায় ত্রুটি ধরা পড়ে। এতে আরেক দফা প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।
সম্প্রতি খুলনা-মংলা বন্দর রেলপথ প্রকল্পটির দ্বিতীয় দফা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ রেলভবনে এ-সংক্রান্ত সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভার কার্যপত্রে দেখা যায়, ভারতের ঋণে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে খুলনা-মংলা বন্দর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি। ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর এটি অনুমোদন করে একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি)। সে সময় এর ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
২০১৫ সালের মে মাসে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন করা হয়। এতে দেখা যায়, ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আর সর্বশেষ হিসাবে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়াচ্ছে চার হাজার ৭৯৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই দফা মিলিয়ে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে তিন হাজার ৭৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা ১৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ব্যয় বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনটি প্যাকেজের আওতায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে খুলনা-মংলা বন্দর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজের (ডব্লিউডি-১) আওতায় রয়েছে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ, দ্বিতীয় প্যাকেজের (ডব্লিউডি-২) আওতায় পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসা রেল সেতু নির্মাণ এবং তৃতীয় প্যাকেজের (ডব্লিউডি-৩) আওতায় রয়েছে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেলপথে সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা স্থাপন।
তিন প্যাকেজের মধ্যে দ্বিতীয়টির আওতায় রূপসা রেল সেতু নির্মাণে নকশা জটিলতা দেখা দেয়। এতে রেল সেতুর পাইল লোড টেস্ট করে দেখা যায়, আগের ডিজাইনে পাইল নির্ধারিত লোড বহনে সক্ষম নয়। ফলে পরামর্শক কর্তৃক পাইলের গভীরতা বাড়ানো হয়। এতে প্যাকেজটির ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আর প্রথম প্যাকেজটির আওতায় ৩১টি ছোট ও মাঝারি সেতু এবং ১০৭টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো নির্মাণ করতে গিয়ে মাটির গুণাগুণ খারাপ থাকায় পাইলের দৈর্ঘ্য বাড়াতে হয়েছে। এতে প্রথম প্যাকেজের ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে প্রতিটি স্কিউ (কিছুটা তির্যক) রেল সেতুকে সোজা করে নির্মাণ করায় লাইনার ওয়াটারওয়েকে কভার করার জন্য সেতুগুলোর স্প্যান বাড়াতে হয়েছে। এছাড়া আরডিএসও স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে নির্মাণের সময় কমানোর জন্য কিছু থ্রো টাইপ সেতুকে প্লেট গ্রিডার সেতুতে নির্মাণ করায় সেতুর লেভেল বেড়ে গেছে। ফলে এ উচ্চ লেভেলকে মেলানোর জন্য দুই পাশে ফরমেশন লেভেল/এমব্যাংকমেন্ট প্রোফাইলের উচ্চতা বেড়ে গেছে। এতে এমব্যাংকমেন্ট ফাইলের পরিমাণ বেড়েছে।
কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় কিছু কিছু ব্রিজকে এমনভাবে ডিজাইন করতে হয়েছে, যাতে খালের পাশের রাস্তা ব্রিজের নিচে রাখা যায়। যেমনÑমহিষ খামারের কাছে খালের পাশে একটি পার্শ্বরাস্তা সেতু নং-২০-এর ঠিক বাইরে রেখে প্রণয়ন করা হয়েছিল এবং সেই রাস্তার জন্য একটি ম্যানড এলসি গেটের সংস্থান ছিল। পরে ম্যানড গেটের জনবল নিয়োগ খরচকে বাদ দিতে সেতুর অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন এনে একটি স্প্যানের নিচ দিয়ে রাস্তার সংস্থান রাখা হয়েছে। এতে রেলের টপ লেভেল বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সেতুর ফরমেশন লেভেল ও সংযোগ সড়ক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে এমব্যাংকমেন্ট নির্মাণের সময় কিছু জায়গায় সফ্ট সয়েল পাওয়া যায়। সেগুলো অপসারণ করে বালি দিয়ে তা প্রতিস্থাপন করা হয়। নকশা রিভিউয়ের সময় ভবনগুলোর পাইলের দৈর্ঘ্য বেড়েছে। এছাড়া শিডিউলড আইটেমের একক দর বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি নন-শিডিউলড আইটেম যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে গেছে।
সূত্রমতে, প্রকল্প ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি এর বাস্তবায়ন কালও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় প্রথমবার ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাতেও অগ্রগতি না হওয়ায় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর তৃতীয় দফায় আবারও দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কাক্সিক্ষত অগ্রগতি না হওয়ায় তা ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাই প্রকল্পটির মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।